নির্বাচন যেতে না যেতেই ঊর্ধ্বমুখী নিত্য পন্যের বাজার। মৌসুমে এসেও বেশির ভাগ সবজির দাম ৫০ টাকার ঊর্ধ্বে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মুরগি ও পেঁয়াজের দাম। নির্বাচনের জন্য সরবরাহ কম থাকাকেই দাম বৃদ্ধির কারণ বলছেন ব্যবসায়ীরা। বিপরীতে সাধ্যের মধ্যে বাধ্য হয়ে পরিমাণে কম করে হলেও কিনছেন সাধারণ মানুষ।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন, আতুরার ডিপোসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেয়া যায়।
বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ফুলকপি বিক্রি করা হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, লাউ ৩০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০ টাকা৷ পাশাপাশি টমেটো ৪০-৫০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, সিম বিচি ২২০ টাকা, সিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে ভরা মৌসুমে এসেও কাঁচা মরিচ কেজি প্রতি ৬০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, তিত করলা ৮০ টাকা, পেঁয়াজ পাতা ৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এক দরে ৬০ টাকা করে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে দীর্ঘদিন, বিপরীতে পুরাতন আলুর দাম আরও ১০টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
নগরীর অক্সিজেন কাঁচা বাজারে আসা পোশাক কারখানার শ্রমিক তৌহিদুল আলম বলেন, এখন শীতকাল। একসময় শীত আসলে মৌসুমী সবজিগুলোর দাম কম থাকতো। এখন বেশিভাগ সবজির দাম ৫০ টাকার উপরে। আমি এসে ৫০০ গ্রাম করে চার পদের সবজি কিনেছি। আলু গেল বছর কিনেছি তিন কেজি নব্বই টাকা এবছর এক কেজি আলু ৬০ টাকা। কিছু ত করার নাই, আমাদের বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। যেখানে আগে এক কেজি সবজি নিতাম এখন সেটি ৫০০ গ্রাম নিচ্ছি।

একই বাজারের সবজি বিক্রেতা জমিস উদ্দিন বলেন, আমরা বেশি দামে সবজি কিনলে তা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে৷ গত কয়েকদিন আগের নির্বাচন থাকায় সবজির সরবরাহ কম ছিল, তাই সেটিরও একটু প্রভাব পড়ছে বাজারে।
সবজির বাজারে উত্তাপ মাঝামাঝি হলেও। ডালব সেঞ্চুরি করেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। দুদিনের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে বাজার ভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। একই সঙ্গে সোনালী মুরগি ৩৩০ টাকা ও কক মুরগি ৩২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৯০০ টাকা পর্যন্ত। তবে বেশিরভাগ মাংস বিক্রির দোকানে নেই মূল্যতালিকাও।
মুরগি কিনতে আসা একাধিক ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এভাবে দিনে-রাতে দাম বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক। কদিন আগেও ১৭০-১৮০ টাকায় মুরগি বিক্রি হয়েছে। তা এক লাফে আজ ২০ টাকা কিভাবে বেড়ে গেছে। সরকারের উচিত বাজার তদারকি বাড়ানো৷ তা না হলে দিনমজুর ও মধ্যবিত্তরা না খেয়ে থাকতে হবে।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, শীত মৌসুমে মুরগি নানা রোগে আক্রান্ত হয়। সেটি থেকে রক্ষা করতে মুরগিগুলোকে সেভাবে রাখতে হয়, পাশাপাশি মুরগির খাবারের দামও বাড়ছে। সব মিলিয়ে সেটির প্রভাব আমাদের উপর পড়লে ৫-১০ টাকা দাম বেড়ে যায়।
রান্নার অন্যতম উপকরণ পেঁয়াজের দামও স্থির হচ্ছে না। মৌসুমে এসেও দেশি পেঁয়াজে বাজার ভরছে। তবে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকা এবং ইন্ডিয়ানটা ১৩০-১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। আদা-রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ ও ২৪০ টাকা।
আতুরার ডিপো বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা শাদেহা আক্তার বলেন, পেঁয়াজের দাম বেশি। আগে ৫ কেজি একসাথে কিনতাম। এখন এক কেজির বেশি পেঁয়াজ কিনতে সাহস হয় না। আদা রসুনেরও একই অবস্থা। আমরা তো বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। না কিনে উপায় নাই। পেঁয়াজ ছাড়া তো আর রান্না করা যাবে না৷ শুনেছি সামনে নাকি আরও দাম বাড়বে। সরকার যদি কিছু না করে আমরা অসহায়।
বাঁশখালী স্টোরের পেঁয়াজ বিক্রেতা সুমন বলেন, ভোটকে ঘিরে গত কয়েকদিন প্রায় সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ কিছুটা কম ছিল। ফলে তা পেঁয়াজেও পড়েছে। আমরা খাতুনগঞ্জ থেকে কিনে এনে ৫ বা ১০ টাকা লাভ করছি। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই, আমরা খুচরা বিক্রেতা।