জার্মানির মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ছয় দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বজুড়ে অস্ত্র ও যুদ্ধের পেছনে অর্থ খরচ না করে তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার ১৬ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখ শহরে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্স চলবে রোববার ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মিউনিখ পৌঁছান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার বিকেলে হোটেল বেয়েরিশার হফের কনফারেন্স হলে কনফারেন্স চেয়ারের উদ্বোধনী ও স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপনকালে যোগ দেন তিনি।
এরপর ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স” শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ছয় দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে আবেগঘন বক্তব্য দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবেদনহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং তার পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয় দরকার।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মনে রাখা উচিত, যখন মানবতার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে, সংকীর্ণ স্বার্থ অনুসরণ করে কিছুই হবে না।
ছয় দফা প্রস্তাবের প্রথম প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো যে অঙ্গিকার করেছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমাদেরকে অবশ্যই ২০২৫ থেকে পরবর্তী নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রার ব্যাপারে একমত হতে হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, বিশ্বকে যুদ্ধ ও সংঘাত, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিক বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নির্বিচার হত্যাকাণ্ড থেকে সরে আসতে হবে যেমনটা আমরা গাজা ও অন্যত্র দেখছি।
প্রধানমন্ত্রী তার তৃতীয় প্রস্তাবে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট দুর্যোগ প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য যে অর্থায়ন করা হয় তাতে প্রচণ্ড ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। অভিযোজন অর্থায়নের বর্তমান হারকে অন্তত দ্বিগুণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি অভিযোজনে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ইউরো (১০৭ কোটি ডলারের সমান) দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে ধন্যবাদ জানান।
চতুর্থ প্রস্তাবর্শটি রেখে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিদ্যমান আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল পাওয়ার পথ সুগম করার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান করতে হবে।
এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থায়ন পাওয়ার জন্য আমাদের দুটি যোগ্য প্রতিষ্ঠান আছে, আরও দুটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পঞ্চম পরামর্শে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক অর্থায়নে সংস্কার করতে হবে। বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ঋণের বোঝা ব্যবস্থাপনায় অনুদান ও ঋণের ছাড়ে সুযোগ বাড়াতে হবে।
সর্বশেষ পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু কর্মের জন্য ব্যক্তিগত পুঁজি প্রবাহকে একত্রিত করার কথা বলেছেন। এরজন্য সরকারগুলোকে সঠিক পরিকল্পনা ও নীতি গ্রহণ এবং উপকরণে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।