মাদার তেরেসা: হাসি, চকলেট আর ভালোবাসার সুপারস্টার!

মাদার তেরেসা: হাসি, চকলেট আর ভালোবাসার সুপারস্টার!

একজন নারী, যার ছোট্ট হাসি বদলে দিয়েছিল হাজারো জীবনের গল্প…
একজন নারী, যে চকলেটের মতো মিষ্টি, কিন্তু ভালোবাসায় ছিল বিশাল…
হ্যাঁ, আমরা কথা বলছি মাদার তেরেসার!

২৬ আগস্ট ১৯১০ সালে আলবেনিয়ার স্কোপজে জন্ম নেন তিনি। জন্মের সময় তার নাম ছিল অ্যাগনেস গনক্সা বোজাক্ষিউ। ছোটবেলা থেকেই অন্যের জন্য ভাবতে ভালোবাসতেন। খুব অল্প বয়সেই তার মনে হয়েছিল, জীবনের আসল উদ্দেশ্য কেবল নিজের জন্য নয়, বরং অন্যের জন্য বেঁচে থাকা।

মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি নিজের পরিবার, স্বপ্ন, সবকিছু ছেড়ে চলে আসেন দূরদেশ ভারতবর্ষে। তখন তিনি ঢুকে পড়েন ধর্মীয় জীবনযাত্রায় এবং কলকাতাকে বেছে নেন নিজের কর্মক্ষেত্র হিসেবে। ভাবুন তো, এক অচেনা শহরে, ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন সংস্কৃতিতে কী ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি! কিন্তু তার কাছে ভয় নামক শব্দ ছিল না, ছিল কেবল ভালোবাসা আর মমতা।

কলকাতায় এসে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’। শুরুটা ছিল ছোট, কিন্তু তার অক্লান্ত পরিশ্রমে এটি পরিণত হয় হাজার হাজার মানুষের আশ্রয়স্থলে। ক্ষুধার্ত, অসুস্থ, গৃহহীন, অনাথ শিশু, কুষ্ঠরোগী—যারা সমাজ থেকে বঞ্চিত ছিল, তারা সবাই খুঁজে পেয়েছিল আশ্রয় এই মায়ের কাছে।

মাদার তেরেসা: হাসি, চকলেট আর ভালোবাসার সুপারস্টার!

মাদার তেরেসা বলতেন— ‘যদি তুমি শত শত মানুষকে সাহায্য করতে না পারো, অন্তত একজনকে সাহায্য করো।’

তার প্রতিটি কাজেই ছিল এই দর্শনের প্রতিফলন। তিনি কখনো কোনো মানুষকে ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ে আলাদা করেননি। তার কাছে সবাই সমান, সবাই ঈশ্বরের সন্তান।

১৯৭৯ সালে তিনি পান নোবেল শান্তি পুরস্কার। কিন্তু পুরস্কার নিয়ে যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন— ‘এগুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার আসল পুরস্কার হলো দরিদ্রের মুখে হাসি।’

তিনি শুধু কাজই করেননি, তিনি মানুষের হৃদয়ে আশা জাগিয়েছিলেন। একবার এক শিশু তাকে জিজ্ঞেস করেছিল—
‘আপনি তো সবসময় অন্যদের জন্য দেন, নিজের জন্য কিছু রাখেন না?’
মাদার তেরেসা হেসে বলেছিলেন—
‘ভালোবাসা ভাগ করলে কখনো কমে না, বরং আরও বেড়ে যায়’
তার এই কথাই প্রমাণ করে— বড় কাজ করতে বিশাল অর্থ বা ক্ষমতা লাগে না, দরকার কেবল একটি খোলা হৃদয়।

মাদার তেরেসার কাজ সীমাবদ্ধ ছিল না শুধু কলকাতায়। তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। প্রায় ১৩০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল তার সেবামূলক কার্যক্রম। হাসপাতালে, অনাথ আশ্রমে, বৃদ্ধাশ্রমে— সর্বত্র তিনি রেখে গেছেন ভালোবাসার ছাপ।

কিন্তু জীবনের শেষ দিকে তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। সেদিন যেন সারা বিশ্ব কেঁদেছিল মানবতার এই মায়ের জন্য। তবে তার মৃত্যুতে তার আলোর প্রদীপ নিভে যায়নি। বরং তার রেখে যাওয়া ভালোবাসা আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে।

২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে ‘সেন্ট টেরেসা অব ক্যালকাটা’ নামে সন্ত হিসেবে ঘোষণা করেন। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ বিশ্বাস করে—তিনি কেবল একজন দাতা বা সমাজসেবী নন, তিনি মানবতার প্রতীক।

তার জন্মদিনে আমরা শুধু তাকে স্মরণই করি না, বরং শিখি— যদি পৃথিবী বদলাতে চাই, তবে শুরু করতে হবে এক ছোট্ট কাজ দিয়ে, একটিমাত্র ভালোবাসার হাসি দিয়ে।

কল্পনা করুন, যদি আজও মাদার তেরেসা আমাদের মাঝে থাকতেন, হয়তো তিনি হাসিমুখে হাতে একটি চকলেট তুলে দিয়ে বলতেন—
‘আজকের কাজ: ভালোবাসা ছড়িয়ে দাও!’

শুভ জন্মদিন মাদার তেরেসা— মানবতার সুপারস্টার, দুনিয়ার সবচেয়ে মিষ্টি হৃদয়!

Scroll to Top