মাইকেলের জন্মবার্ষিকীতে ‘কহে বীরাঙ্গনা’র বিশেষ প্রদর্শনী

মাইকেলের জন্মবার্ষিকীতে ‘কহে বীরাঙ্গনা’র বিশেষ প্রদর্শনী

মেধাবী অভিনেত্রী বন্যা মির্জা থিয়েটারে ৩০ বছর পার করে দিয়েছেন। অভিনয় করেছেন বেশকিছু সাড়া জাগানো নাটকে। তবে এবারই প্রথম একক অভিনীত নাটকে অভিনয় করতে যাচ্ছেন। আগামীকাল ও পরশু (২৩ ও ২৪ জানুয়ারি, সন্ধ্যা ৭ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার) দুটি শো হবে ‘পারো’ নামের এই নাটকের। উদ্বোধনী মঞ্চায়নের আগে বার্তা২৪.কমের মুখোমুখি হয়েছেন বন্যা। কথা বলেছেন মাসিদ রণ


দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নাটকে অনেক ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে প্রসংশিত হয়েছেন। তবে সেগুলোতে পাশে পেয়েছেন সহশিল্পীদের। এবার একা একটি নাটক টেনে নিতে হবে। তা ভেবে কেমন অনুভূতি হচ্ছে?


‘পারো’তেও কিন্তু আমার সঙ্গে সহ-অভিনয়শিল্পী থাকবেন। আসলে থিয়েটার প্রোডাকশন কিংবা সিনেমা কিছুই কিন্তু পুরোপুরিভাবে একা করা যায় না। অন্যদের সাপোর্ট দরকার হয়। তবে একটি চরিত্রের ওপর গল্প বলে হয়ত একজন শিল্পীই বেশি পরিচিতি পান।
অনেকেই নিজের দল থেকে বেরিয়ে একক নাটক করে থাকেন। এটা তাদের চয়েস, আমি সেই সিদ্ধান্তকে খারাপ চোখে দেখি না, বরং সম্মান করি। আবার অনেক সিনিয়র শিল্পী যারা আছেন, তাদের কেউ কেউ নিজের দল থেকেও একক নাটক করেছেন। আমিও নিজের দল থেকে করার সুযোগ পেয়েছি। এটি আমার খুবই স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। কারণ আমার দল ‘দেশ নাটক’ই আমার আইডেন্টিটি। দলের আমি, আমার দল- বিষয়টি এমন। এজন্য এই সুযোগটি পেয়ে আমি ভীষণ সম্মানীত বোধ করছি।

বন্যা মির্জা /  ছবি : নূর এ আলম


তবে অন্য কথাও রয়েছে। আমরা যখন একটি থিয়েটার প্রোডাকশন করি, তখন অনেক শিল্পী অভিনয়ের সুযোগ পান। বিশেষ করে ‘দেশ নাটক’-এর প্রোডাকশনগুলোতে বরাবরই হিউজ কাস্টিং। ২০-৩০ জন শিল্পী মিলে একটি নাটক করি। কিন্তু দল যখন একক নাটক করে তখন কিন্তু অন্যদের সুযোগ নষ্ট হয়।

‘দেশ নাটক’-এর আরেকটি ভালো রেওয়াজ আছে। সেটি হলো- একটি নাটকের একটি নির্দিষ্ট চরিত্র আমরা তিন-চারজন শিল্পী ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে করে থাকি। তার বড় উদাহরণ ‘নিত্যপূরাণ’ কিংবা ‘জলবাসর’ নাটক দুটি। থিয়েটারে সাবস্টিটিউট ক্যারেক্টার বলে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে। অর্থাৎ একজন শিল্পী একটি নাটকের নির্দিষ্ট চরিত্র করবেন। যদি তিনি কোন কারণবশত সেটি না করতে পারেন তখন তার বদলে আরেকজন শিল্পীকে দিয়ে সেই শো’টি চালিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু আমার দল ‘দেশ নাটক’ সেই চর্চাটি করে না। আমরা আগে থেকেই বলি দিয়ে থাকি যে, এই শোটিতে নির্দিষ্ট চরিত্র করবেন নাজনিন হাসান চুমকী অথবা সুষমা সরকার কিংবা বন্যা মির্জা।

আর ‘পারো’ নাটকটির ক্ষেত্রে বলতে চাই, যেহেতু এটি নাট্যকার আমার জন্যই লিখেছেন, ফলে চরিত্রটি সব সময় আমিই করব। তবে আমি বা দলের কেউ চাই না যে কোন কারণে আমি না করতে পারলে নাটকটি বন্ধ রাখব। তাই এই চরিত্রটি আরেকজন আত্মস্থ করে রেখেছেন। তিনি হলেন সুষমা সরকার। তিনিও শো করবেন।

বন্যা মির্জা /  ছবি : নূর এ আলম



‘পারো’ নাটকটি নিয়ে জানতে চাই…


‘পারো’ রচনা ও নির্দেশনা মাসুম রেজার। আসলে একক নাটকতো একটু কঠিন হয়। ৫-৭টি চরিত্র একাই করতে হয়। এজন্য দু-তিন মাস সময় পেলে কাজটি আরাম করে করা যায়। কিন্তু আমরা অতো সময় পাইনি আসলে। কোভিড চলাকালীন সময়ে আমরা নাটকটি একটু পাঠ করেছিলাম। এরপর পুরোদমে রিহার্সেল শুরু করি জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে। এই ২০ দিনেই পুরো নাটক মঞ্চের জন্য তৈরী হয়েছে। ভীষণ কষ্ট হয়েছে, মানসিক প্রেসারও আছে। আজকেও একটি টেকনিক্যাল শো আছে। কাল ও পরশু (২৩ ও ২৪ জানুয়ারি, সন্ধ্যা ৭ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার) তো দর্শকই নাটকটি দেখতে পাবেন। ‘পারো’কে এক কথায় বলতে গেলে, পুরুষের চোখে দেখা এক নারীর গল্প এটি। চরিত্রটির নাম পারমিতা। সেখান থেকেই নাটকের নাম হয়েছে ‘পারো’।

বন্যা মির্জা /  ছবি : নূর এ আলম



একক নাটক করার স্বপ্ন কি অনেক আগে থেকেই ছিল?


একদমই না। একক নাটকের ব্যাপারে আমার কোনদিনই কোন আগ্রহ ছিল না। ফলে আমি কখনোই ভাবিনি আমাকে একক নাটক করতে হবে। প্রশ্ন আসতে পারে, তবে এখন কেন আমি একক নাটক করছি? নাট্যকার মাসুম রেজা তার নিজস্ব ভাবনা থেকে একটি একক নাটক লিখেছেন। এরপর তিনি অনেকবার বলেছেন যে, এই নাটকটি তিনি আমার জন্যই অর্থাৎ আমার কথা ভেবেই লিখেছেন। এমনকি এই নাটকটি নিয়ে যে ইস্যুটি ছাপা হয়েছে, তাতেও তিনি লিখেছেন যে, তার লেখা তিনটি নাটক- পারাপার, পেন্ডুলাম ও পারোর মধ্যে একটি তিনি আমার জন্য লিখেছেন।

একজন নাট্যকার, তাও আমার মাসুম রেজার মতো নাট্যকার যখন কোন একজন অভিনেতার কথা ভেবে একটি নাটক লেখেন সেটি চাট্টিখানি কথা নয় কিন্তু। কারণ আমার চোখে, মাসুম রেজা এ সময়ে ঢাকার মঞ্চের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাট্যকার। এ নিয়ে কোন রকম সংশয়ের জায়গা নেই। তিনি যখন বলেন, তার লেখা একটি নাটক আমার জন্যই লেখা হয়েছে, সেটি আমার জন্য ভীষণ সম্মান ও প্রাপ্তির।

বন্যা মির্জা /  ছবি : নূর এ আলম



শোবিজ তারকা হিসেবে দেশব্যাপী খ্যাতি পেলেও বরাবরই থিয়েটারকে প্রাধাণ্য দিয়েছেন। কারণ কী?


সেটিই তো আমার জন্য স্বাভাবিক বিষয়। কারণ থিয়েটার থেকেই আমার জন্ম। এসএসসির পরপরই আমি দেশ নাটকে যুক্ত হই। মঞ্চে আমার ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে। তাছাড়া আমরা একটি পরম্পরা মেনে চলেছি। আমাদের দলের সিনিয়দের দেখেছি প্রথমে মঞ্চ, তারপর শোবিজে নাটক কিংবা সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আমিও তাই করেছি। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা নিয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি দেশ নাটকে যুক্ত হওয়ার অনেক পরে।

বন্যা মির্জা /  ছবি : নূর এ আলম



সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আপনার জার্নি তাহলে থিয়েটার দিয়েই?


না। স্কুলে থাকতে কবিতা আবৃত্তি করতাম। আবৃত্তি দিয়েই সাংস্কৃতিক কর্মাকাণ্ড শুরু। এরপর থিয়েটারচর্চা, থিয়েটার নিয়ে পড়াশুনা এবং তারই হাত ধরে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয়। ‘দেশ নাটক’-এ ঢোকার পর প্রথম একটি পথনাটকে অভিনয় করি। সেটিও ছিল মাসুম রেজার রচনায়। নির্দেশক ছিলেন সালাহউদ্দিন লাভলু। আর প্রথম পূর্ণাঙ্গ নাটকের কথা বলতে গেলে, সেটি ছিল ‘ঘর লোপাট’। রচনা ও নির্দেশনা শামসুল আলম বকুলের। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সময় সেখান থেকে ‘ডলস হাউজ’ করেছি।

আমি খুব সৌভাগ্যবান যে অনেক অনেক শেখার ক্ষেত্র পেয়েছি। সারা দেশে নানা ধরনের ওয়ার্কশপ করেছি। আমার দল ‘দেশ নাটক’ মূলত মৌলিক নাটক নিয়েই কাজ করে। তবে দলের বাইরের কয়েকজন গুণী মানুষও আমাদের নাটক নির্দেশনা দিয়েছেন। মনোজ মিত্রের ‘দর্পণে শরৎশশী’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন আলী যাকের। যেটির ৪৯তম শো পর্যন্ত একটি প্রধাণ চরিত্র করেছিলেন আফসানা মিমি। আমি সেই নাটকটি ৫০তম শো থেকে করার সুযোগ পাই। সেই নাটকে ইসরাত নিশাতের সঙ্গে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। ‘ঘর লোপাট’-এও তিনি আমার সহশিল্পী ছিলেন। আমি মনে করি, বাংলাদেশের মঞ্চে ইসরাত নিশাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতা ছিলেন। তিনি আমার অভিনয়ের অনেক ক্ষেত্রে সহযোগীতা করেছেন। তার সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি, সেটি আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের ছিল। এছাড়া আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষকদের কথা বলতে চাই। রহমত আলী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, ইসরাফিল শাহীন এবং বিশেষ উল্লেখযোগ্য শিক্ষক হিসেবে বলতে চাই ড. সৈয়দ জামিল আহমেদের কথা। এছাড়া আমাদের শিক্ষক ছিলেন কবির চৌধুরী, সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, নিরঞ্জন অধিকারী, মমতাজউদ্দিন আহমেদ, জিয়া হায়দার এবং ড. সেলিম আল দীন। তারা সবাই আমাদের কোর্স করিয়েছেন। আমাদের ব্যাচ ভীষণ সৌভাগ্যবান যে আমরা বাংলাদেশের সকল ভালো শিক্ষদের ক্লাস পেয়েছি। আর কপালে এমন অভিজ্ঞতা জুটবে কি না আমি জানি না।

বন্যা মির্জা /  ছবি : নূর এ আলম


বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনয়ের পাশাপাশি দেশ নাটকের প্রায় সব নাটকের পোশাক পরিকল্পনা আমি করেছি। অন্য দলেরও বেশকিছু নাটকের পোশাক পরিকল্পনা করেছি। ‘পারো’ নাটকের কস্টিউম ডিজাইনও আমার করা।

Scroll to Top