মধ্যবিত্তরা কেন ‘বড়লোক’ হতে পারছে না? ঋণের পথে হেঁটে কোন বড় সুযোগ হারাচ্ছে তারা? LinkedIn পোস্ট ঘিরে তুমুল বিতর্ক!

মধ্যবিত্তরা কেন ‘বড়লোক’ হতে পারছে না? ঋণের পথে হেঁটে কোন বড় সুযোগ হারাচ্ছে তারা? LinkedIn পোস্ট ঘিরে তুমুল বিতর্ক!

মনীষ একটি উদাহরণ দেন—তাঁর এক বন্ধু বছরে ১৫ লক্ষ টাকা আয় করেন, কিন্তু মাসে ৪৫ হাজার টাকার EMI দেন। তিনি চাইলেই ৩ লক্ষ টাকার একটি পুরনো গাড়ি কিনতে পারতেন, কিন্তু তার পরিবর্তে ১০ লক্ষ টাকার নতুন গাড়ি কিনেছেন, এই বলে যে—“আমি তো এটা ডিজার্ভ করি।” মনীষের মতে, এটাই সেই মানসিকতা, যা ব্যাঙ্কগুলো চায়।

মধ্যবিত্তরা কেন ‘বড়লোক’ হতে পারছে না? ঋণের পথে হেঁটে কোন বড় সুযোগ হারাচ্ছে তারা? LinkedIn পোস্ট ঘিরে তুমুল বিতর্ক!

চাহিদা বনাম প্রয়োজন: মধ্যবিত্ত কি ঋণের পথে হেঁটে সম্পদ গড়ার সুযোগ হারাচ্ছে? মনীষ গোসারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক

ভারতে গত চার বছরে ক্রেডিট কার্ডের ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ₹২.৯২ লক্ষ কোটি টাকা। পার্সোনাল লোন বেড়েছে ৭৫%। মনীষ জানান, কেউ কাউকে জোর করে এই ঋণে ঠেলে দেয়নি—এটা ইচ্ছার তাড়নায়, ভবিষ্যতের নিরাপত্তার বদলে আজকের স্বাচ্ছন্দ্য বেছে নেওয়ার ফল।

একটি iPhone কেনা, বা দামী রেস্তোরাঁয় খাওয়া—এইসব খরচ আসলে বিনিয়োগ হতে পারত মিউচুয়াল ফান্ডে বা সম্পদ গঠনের অন্য খাতে।

https://www.linkedin.com/embed/feed/update/urn:li:share:7337710442544271360?collapsed=1

ইচ্ছা আর প্রয়োজনের গুলিয়ে ফেলা

গোসারের মতে, মধ্যবিত্তের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হল—”চাই” আর “প্রয়োজন” এর মধ্যে ফারাক না বোঝা।

যেমন—”অফিস যেতে গাড়ি দরকার”, এই যুক্তিতে দামি গাড়ি কেনা। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়তো আরও কম দামে মেটানো যেত। মূলত সামাজিক মর্যাদা, বিলাসিতা—এইসবের চাপে তারা নিজেদের বুঝিয়ে নেয়, এটা দরকারি।

সোশ্যাল মিডিয়া: আর্থিক অস্থিরতার নতুন পাম্প

Instagram, Facebook-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো এই মানসিকতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সেখানকার ঝকঝকে জীবন দেখে নিজের জীবনকেই ‘কম’ মনে হওয়া, অচেনা লোকদের সঙ্গে অদৃশ্য প্রতিযোগিতা—এসবই মানুষকে অপ্রয়োজনীয় খরচে ঠেলে দিচ্ছে।

ফলে কী হচ্ছে?

ঋণ বাড়ছে, সঞ্চয় কমছে। বিলাসিতা বাড়ছে, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা কমছে।“আমি ডিজার্ভ করি” এই ভাবনা যদি হয় মার্কেটিংয়ের ফাঁদ, তাহলে মধ্যবিত্ত সেখানে ধাপে ধাপে হাঁটছে। সোশ্যাল মিডিয়া, ফিনান্সিয়াল ফোমো আর নিজের ‘স্ট্যাটাস’-এর টানে তারা নিজেই নিজের আর্থিক ভবিষ্যৎকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

এই পোস্ট শুধু বিতর্ক তৈরি করেনি, বরং চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে—আমরা আসলে কার জন্য খরচ করছি, নিজের জন্য? না, অন্যের চোখে ভাল দেখানোর জন্য?

🔸 অর্থনৈতিক শিক্ষার অভাব ও আবেগের ঝোঁক

গোসার এটাও স্বীকার করেছেন যে, আমাদের দেশে আর্থিক শিক্ষা এখনও খুব দুর্বল।

সেই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া ও ‘আমি-ও-কি-কোমে’ মানসিকতা আবেগের জোয়ারে যুক্তিসম্মত ভাবনাকে পিছিয়ে দিচ্ছে।

তবে তাঁর মতে, এই দায়ও পুরোটা সিস্টেমের না।

আমাদের প্রতিটা অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত বেছে নেওয়া, আর সেটা স্বীকার করাটাই হল স্মার্ট ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিংয়ের প্রথম ধাপ।

মধ্যবিত্তের আর্থিক ‘ট্র্যাপ’: আসলে নিজেদের তৈরি ফাঁদেই কি জড়িয়ে পড়ছে তারা?

গোসার আরও এক গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন—মধ্যবিত্ত শ্রেণির বহু মানুষ একেবারে প্রাথমিক অর্থনৈতিক অঙ্কটাই বোঝে না বা বোঝার চেষ্টাও করে না।

তিনি জানান, ক্রেডিট কার্ডের ৩৬% সুদের হার আর মিউচুয়াল ফান্ডের ১২% রিটার্ন—এই পার্থক্যটাই অধিকাংশ মানুষ বুঝতে বা হিসেব করতে চায় না। আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্তের ফলে অনেকেই এমন আর্থিক দায় নেন যার ভবিষ্যৎ প্রভাব সম্পর্কে তারা একেবারেই সচেতন নন। যেমন, ১৮,০০০ টাকার EMI-এর পেছনে পাঁচ বছরে ৩ লক্ষ টাকা কেবল সুদেই চলে যায়—এই অঙ্কটাই অনেকের জানা নেই বা জানা সত্ত্বেও মানতে চায় না।

🔸 দায় কি কেবল সিস্টেমের?

গোসার স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন—মধ্যবিত্ত ‘সিস্টেমে ফেঁসে গেছে’—এই বক্তব্য পুরোটাই অর্ধসত্য।

সিস্টেম দড়ি দেয়, কিন্তু গাঁটটা তো আমরা নিজেরাই বেঁধে নিই।

ব্যাংক লোন দেয়, EMI-এর অপশন দেয়, কিন্তু শেষমেশ সিদ্ধান্ত তো আমাদেরই—কেনা, না কেনা।

তাই দোষারোপের আগে নিজেকে প্রশ্ন করা দরকার—আমি কী আসলে আমার ভবিষ্যতের দায় নিচ্ছি?

Scroll to Top