মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রকাশিত ২০২৫ সালের বিশ্বব্যাপী হুমকি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে পাকিস্তানের গণবিধ্বংসী অস্ত্র কর্মসূচি এবং এর সঙ্গে চীনের সম্ভাব্য যোগসূত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশল, পাকিস্তানের সামরিক অগ্রাধিকার এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে বিশদ মূল্যায়ন উঠে এসেছে।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ভারতকে অস্তিত্বগত হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে এবং সেই হুমকি মোকাবেলায় যুদ্ধক্ষেত্র-উপযোগী পারমাণবিক অস্ত্রসহ সামরিক আধুনিকীকরণ চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ভারত চীনকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে এবং পাকিস্তানকে একটি “সহায়ক নিরাপত্তা সমস্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের এপ্রিলে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারত পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যার ফলে ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত দু’দেশের মধ্যে ড্রোন, কামান ও ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময় হয়। ১০ মে’র পর উভয় দেশ পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত চীনবিরোধী অবস্থান জোরদার ও বৈশ্বিক নেতৃত্বে উত্তরণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ভারতীয় সামরিক আধুনিকীকরণ অব্যাহত রয়েছে, যার অংশ হিসেবে অগ্নি-১ প্রাইম, অগ্নি-ভি মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলি টার্গেটেবল রিএন্ট্রি ভেহিকেলের পরীক্ষা করা হয়েছে, এবং দ্বিতীয় পারমাণবিক-চালিত সাবমেরিন কমিশন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বনির্ভরতা গড়ে তোলার লক্ষ্য অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি দাবি করে, পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার আধুনিকীকরণ করছে এবং সেগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় সচেষ্ট। কিন্তু চীন ও চীনের ঘনিষ্ঠ সরবরাহকারীদের কাছ থেকে প্রযুক্তি ও উপকরণ সংগ্রহ করছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। হংকং, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাধ্যমে এসব পণ্য পরিবহন করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
তবে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর ঘিরে নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়ছে। ২০২৪ সালে চীনা প্রকল্পে নিযুক্ত সাতজন চীনা নাগরিক পাকিস্তানে নিহত হন, যা ইসলামাবাদ-বেইজিং সম্পর্কে উত্তেজনার নতুন উৎস হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিবেদনে ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নিয়েও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারত রাশিয়ান অস্ত্র আমদানি কমিয়ে আনলেও এখনও ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধবিমানের খুচরা যন্ত্রাংশে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এই সম্পর্ককে ভারত তার কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখে।
প্রতিবেদনটিতে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদ ও আঞ্চলিক উত্তেজনা সম্পর্কেও বিশদ তথ্য দিয়েছে। জানুয়ারিতে ইরানের সঙ্গে সীমান্তে বিমান হামলার পর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া মার্চে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একে অপরের ভূখণ্ডে বিমান ও কামান হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল তথাকথিত জঙ্গি অবকাঠামো।