কলকাতা: বিশ্বব্যাপী তো বটেই, ভারতীয় মহিলারাও সবচেয়ে বেশি ভোগেন স্তন ক্যানসারে। এ দেশে প্রতি বছর ১.৭ লক্ষ মহিলা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এঁদের বয়স ৫০ বছরের বেশি। তবে কম বয়সী মহিলাদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার ধরা পড়লে সামান্য চিকিৎসাতেই সেরে যায়। এমনটাই বললেন কার্কিনোস হেলথকেয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের কনসালটেন্ট মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট ডাঃ শ্রেয়া মল্লিক।
স্তন ক্যানসার কী:
স্তনের টিস্যুতে ম্যালিগন্যান্ট (ক্যানসার) কোষ তৈরি হওয়াই স্তন ক্যানসার। যখন টিউমার নালি বা লোবিউলের মধ্যে স্তনের টিস্যুতে বৃদ্ধি পায় তখন এটা ধরা পড়ে।
কেন স্তন ক্যানসার হয়:
নির্দিষ্ট কোনও কারণ ছাড়াই স্তন ক্যানসার হতে পারে। তবে কয়েকটি বিষয় স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। সেগুলি হল– বয়স (বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকি বাড়ে), কম বয়সে পিরিয়ড শুরু এবং দেরিতে মেনোপজ, বুকের দুধ খাওয়ানোর অভাব, স্থূলতা, নিঃসন্তান অথবা ৩০ বছর বয়সের পর প্রথম সন্তান, নিকটাত্মীয়ের যদি স্তন বা ওভারিয়ান ক্যানসার হয়, শৈশবে বুকে রেডিয়েশন হয়ে থাকলে, কমবাইনড হরমোন থেরাপির দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ।
স্তন ক্যানসারের সাধারণ লক্ষণ: অনেক সময় পিরিয়ডের আগে স্তন কোমল হয়ে আসে এবং গুটলি পাকিয়ে যায়। বয়স, গর্ভাবস্থা এবং ওজন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্তনের আকার এবং আকৃতির পরিবর্তন হয়।
Dr. Sreya Mallik, Consultant Medical Oncologist, Karkinos Healthcare Pvt. Ltd.
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নিজের স্তন সম্পর্কে জানা। সেগুলো কেমন দেখাচ্ছে অনুভব করা। কোনও পরিবর্তন দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসককে জানানো।
স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা উচিত। সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল ব্রেস্ট লাম্প। স্তনে ব্যথাহীন পিণ্ড তৈরি হওয়া।
স্তন ক্যানসারের অন্যান্য লক্ষণ:
স্তনের আকার ও আকৃতির পরিবর্তন।
স্তনের কোনও অংশের চামড়া ডিম্পলিং বা ঘন হয়ে যাওয়া।
স্তনবৃন্ত ভিতর দিকে ঢুকে যাওয়া।
স্তনবৃন্ত থেকে স্রাব নির্গত হওয়া। এটা রক্তের দাগও হতে পারে।
বগলে ফোলা বা পিণ্ড।
স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক সনাক্তকরণ পদ্ধতি: প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার সনাক্ত করতে পারলে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে না।
স্ক্রিনিং: স্তন ক্যানসার একদম প্রাথমিক পর্যায়ে স্ক্রিনিং দ্বারা সনাক্ত করা যেতে পারে। স্ক্রিনিং হল উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগে ক্যানসার সনাক্ত করার পদ্ধতি।
ব্রেস্ট সেলফ একজামিনেশন: ২০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে স্তনে কোনও পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে কি না নিজেই পরীক্ষা করা দেখা উচিত।
ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট একজামিনেশন: স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসক স্তন পরীক্ষা করবেন। ৫০ বছরের কম বয়স হলে ২ বছরে একবার। ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে বছরে একবার।
ম্যামোগ্রাম: ৪০ বছর বয়সের পর বার্ষিক ম্যামোগ্রাফি। স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে এমন মহিলাদের ম্যামোগ্রাফি দিয়ে স্ক্রিনিং শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
স্তন ক্যানসার নির্ণয়:
প্রাথমিক মূল্যায়ণ – ম্যামোগ্রাফি বা স্তনের আলট্রাসাউন্ড।
বায়োপসি – রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে।
ব্যাপ্তি এবং বিস্তার – বুকের এক্স-রে, পেটের ইউএসজি, হাড়ের স্ক্যান এবং সিটি স্ক্যান।
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা:
ক্যানসারের স্তর এবং গ্রেড, রোগীর বয়স, মেনোপজের অবস্থা, সাধারণ স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে।
স্তন ক্যানসারে সার্জারি:
ব্রেস্ট কানজার্ভিং সার্জারি – লুম্পেক্টমি (বা ব্যাপক স্থানীয় ছেদন) হল এক ধরনের অপারেশন যেখানে শুধু টিউমার এবং কিছু আশেপাশের স্তনের টিস্যু অপসারণ করা হয়।
রিমুভাল অফ দ্য অ্যাফেক্টেড ব্রেস্ট (মাস্টেক্টমি): স্তনে বড় টিউমার থাকলে এর প্রয়োজন হতে পারে।
কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপি হল অ্যান্টি-ক্যানসার ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যানসারের চিকিৎসা। এটা ক্যানসার কোষকে মেরে ফেলে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি রোধ করে। ক্যানসারের প্রকার এবং পর্যায়ের উপর কেমোথেরাপির ধরণ নির্ভর করে।
হরমোন থেরাপি/ টার্গেটেড থেরাপি/ ইমিউনোথেরাপি: এই ওষুধগুলি রিসেপ্টর বা জিনের উপর নির্ভর করে স্তন ক্যানসারের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। কেমোথেরাপির তুলনায় এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।
রেডিওথেরাপি: রেডিওথেরাপিতে ক্যানসার আক্রান্ত টিস্যুতে উচ্চ শক্তির বিকিরণ রশ্মি দেওয়া হয়।
Published by:Siddhartha Sarkar
First published:
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।