ভারতের বিরুদ্ধে রোমাঞ্চকর জয়ে এশিয়া কাপ শেষ করল বাংলাদেশ

ভারতের বিরুদ্ধে রোমাঞ্চকর জয়ে এশিয়া কাপ শেষ করল বাংলাদেশ
ভারতের বিরুদ্ধে রোমাঞ্চকর জয়ে এশিয়া কাপ শেষ করল বাংলাদেশ

টপ অর্ডার ব্যর্থ থাকলেও সাকিব-হৃদয় জুটি বাংলাদেশকে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে দিশা দেখিয়েছে। শেষ দিকে নাসুম ও মেহেদীর দায়িত্বশীল ইনিংসে বাংলাদেশ লড়াই করার মতো সংগ্রহ দাঁড় করায়। ২৬৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ভারত লড়াই করে। গিল শতক তুলে নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুপার ফোরে নিজেদের শেষ ম্যাচে ৬ রানের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।

আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ। ভারত ইতোমধ্যে ফাইনালে নিজেদের জায়গা পাকা করে নিয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাই একাদশে পরিবর্তন খুব স্বাভাবিক। অবশ্য বাংলাদেশের একাদশেও এদিন পরিবর্তন চোখে পড়েছে। দুই দলই ৫ টি করে পরিবর্তন নিয়ে কলম্বোর প্রেমাদাসায় নেমেছে।

২৬৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যাট করতে নেমেছিল ভারত। বাংলাদেশের অভিষিক্ত বোলার তানজিম সাকিব প্রথম ওভারটা করলেন আর সেই ওভারেই অধিনায়ক রোহিত শর্মার উইকেট তুলে নিলেন। নিজের করা দ্বিতীয় বলেই। ভিরাট কোহলি এদিন একাদশে ছিলেননা। তিনে নামলেন অভিষিক্ত তিলক ভার্মা। তিলকও তানজিমের শিকার হলেন। পিচ হওয়া বল লিভ করলেন, সেই বল গিয়ে আঘাত আনল স্টাম্পে। দলীয় ১৭ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে ভারতের।

একপ্রান্তে শুবমান গিল নিজের ইনিংস গোছানোর কাজ করে যাচ্ছিলেন। লোকেশ রাহুল ইনজুরি থেকে ফিরে ব্যাটে বেশ ভালো করছেন। সেই প্রমাণ আজকেও রাখলেন। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। গিলের সাথে ৫৭ রানের জুটিতে, ব্যক্তিগত ১৯ রানে ফিরেছেন শেখ মেহেদীর বলে। এদিন ইশান কিষানের ব্যাটে রান আসেনি। মাত্র ৫ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়েছেন।

এদিন সূর্যকুমার যাদব একাদশে ছিলেন। গিলের সাথে সঙ্গী হিসেবে ভালোই করলেন। আরও বেশি ভয়ংকর হওয়ার আগে সাকিব আল হাসানের বলে বোল্ড হলেন। ফিরলেন ৩৪ বলে ২৬ রানে। তখনো গিল ক্রিজে ছিলেন। রবীন্দ্র জাদেজা ৭ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি। এরমধ্যে ক্রিজে এসে যোগ হয়েছেন অক্ষর প্যাটেল।

প্যাটেল থাকা অবস্থায় গিল নিজের পঞ্চম ওডিআই সেঞ্চুরি তুলে নেন। সেঞ্চুরি তোলার পর বেশ মারমুখী গিল’কে ফিরিয়েছেন মেহেদী। ১৩৩ বলে ১২২ রান করে নিজের উইকেট হারিয়েছেন এই ওপেনার। তবে প্যাটেল নিজের জায়গা ধরে রাখলেন। শার্দুল ঠাকুরের সাথে ২৭ বলে ৪০ রানের জুটি বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেয়। তবে ১২ বলে যখন ১৭ রান প্রয়োজন, সেই ওভারে এসে মুস্তাফিজুর প্যাটেল ও ঠাকুরের উইকেট তুলে বাংলাদেশের পক্ষে ম্যাচ সহজ করে দেন।

শেষ ওভার করতে আসেন তানজিম হাসান সাকিব। আজকের দিনে তিনি ছিলেন দারুণ। শেষ ওভারে ১২ রান দরকার ছিল। ভারতের শেষ উইকেট। প্রথম ৩ বল ডট দিলেন তানজিম। চতুর্থ বলে চার খেয়েছেন বটে কিন্ত পঞ্চম বলে দুই রান নিতে গিয়ে রানআউটের শিকার হলেন মোহাম্মদ শামি। বাংলাদেশ পেল নিজেদের কাঙ্ক্ষিত জয়।

বাংলাদেশের বোলারদের পক্ষে, তানজিম সাকিব ও শেখ মেহেদী নিয়েছেন ২ টি করে উইকেট। ১ টি করে উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটে নামা বাংলাদেশের পক্ষে লিটন দাসের সাথে ব্যাটে দেখা যায় তানজিদ হাসান তামিমকে। যিনি এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন। তামিম শুরুটা ভালোই করেন। গ্যাপ খুঁজে বাউন্ডারি বের করছিলেন। ওদিকে লিটন কিছুই করতে পারেননি। মোহাম্মদ শামির বলে সরাসরি বোল্ড হওয়া ছাড়া।

তামিম অবশ্য ভাল শুরুর সুবিচার করেননি। শার্দুল ঠাকুরের শর্ট লেংথ বলে ইনসাইড হয়ে বোল্ড হয়েছেন। ৩ চারে ১৩ রান যার সম্বল। একাদশে সুযোগ পেয়েছেন এনামুল হক বিজয়। ৩ নম্বরে নেমে একটি বাউন্ডারি-ই হাঁকিয়েছেন। ১১ বলে ৪ রান করে ঠাকুরের বলে টপ এজে ধরা পড়েছেন লোকেশ রাহুলের তালুতে।

মেহেদী হাসান মিরাজ এদিন তাওহিদ হৃদয়ের আগেই নামলেন। ২৮ বলে ১৩ রান করে স্লিপে ক্যাচ তুলেছেন। বলার মতো পারফর্ম করেছেন শুধু অধিনায়ক সাকিব, সাথে হৃদয়। দুজন মিলে গড়ে তুলেছিলেন চমৎকার এক জুটি। বরারবরের মতো বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য এমন জুটি প্রয়োজন ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঠাকুরের ওভারে ৮৫ বলে ৮০ রান করা সাকিব বোল্ড হন। ৬ টি চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো ছিল তাঁর ইনিংস।

ভেঙ্গে যায় ১০১ রানের জুটি। শামীম হোসেন এসে শুধু ৫ বল মোকাবিলার সুযোগ পেয়েছেন। জাদেজার বলেই ১ রান করে লেগ বিফোরের শিকার হয়েছেন। এদিন শেখ মেহেদী’র আগে ব্যাটিংয়ে দেখা যায় স্পিনার নাসুম আহমেদকে। হৃদয়কে যোগ্য সমর্থন দিলেন নাসুম। দুজনের জুটি দেখা গেল ৩২ রানের।

হৃদয় নিজের উইকেট হারালেন শামির বলে। ৮১ বলে খেললেন ৫৪ রানের ইনিংস। তবে নাসুম বেশ মুগ্ধ ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন। হৃদয় যতক্ষন ছিলেন, হৃদয়ের সাথে। পরবর্তীতে শেখ মেহেদীর সাথে। মেহেদীর সাথে ৪৫ রানের জুটি যেমন অর্ধশতক ছুঁতে পারেনি। নাসুম নিজেও খুব দুর্ভাগ্যজনক আউট হয়ে নিজের ব্যক্তিগত অর্ধশতক ছুঁতে পারেননি। ফিরেছেন ৪৫ বলে ৪৪ রান করে। শেষ পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন মেহেদী। করেছেন অপরাজিত ২৩ বলে ২৯ রান। সাথে অভিষিক্ত তানজিম সাকিব বেশ ভাল সঙ্গ দিয়েছেন, খেলেছেন ৮ বলে ১৪ রানের অপরাজিত ইনিংস।

ভারতীয় বোলারদের পক্ষে, শার্দুল ঠাকুর নিয়েছেন ৩ উইকেট, মোহাম্মদ শামি ২ টি। প্রসিদ কৃষ্ণা রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল নিয়েছেন ১ টি করে উইকেট।

Scroll to Top