দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় মোমর ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে ৫৩৩ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করেছে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকালে বীরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোছা. খালেদা বানু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের সহায়তায় উপজেলার গোলাপগঞ্জ বাজারে মোমো ট্রেডার্সের গুদামে অভিযান চালানো হয়। সেখানে গিয়ে দেখি খাদ্য অধিদপ্তরের সিলযুক্ত ৫৩৩ বস্তা চাল প্যাকেটিং করা হচ্ছে। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. জামিনুর রহমানের দাবি, তিনি রসিদমূলে ওই চাল কেনেন। তবে ডিও গ্রহিতা নিয়ম-নীতি না মেনে চাল বিক্রি করেছেন এবং সে কারণে প্রাথমিকভাবে ওই চালের মজুদ অবৈধ বলে গণ্য হওয়ায় চাল জব্দ করে গুদামে তালা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বীরগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহামুদুল হাসান।
তিনি আরও বলেন, ‘গত ৩ আগস্ট আনসার ও গ্রাম পুলিশ টাঙ্গাইল জেলা কমান্ডার কামরুজ্জামানের নামে ২২ দশমিক ১২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার।
মোমর টেডার্স এর প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. জামিনুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি রসিদের ভিত্তিতে চালগুলো ক্রয় করেছেন। তবে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) গ্রহিতা বিধি না মেনে চাল বিক্রি করায় প্রাথমিকভাবে এই মজুদ অবৈধ বলে গণ্য করা হয়েছে।
উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোছা. খালিদা বানু স্বীকার করে জানান, গত ৩ আগস্ট সরকার আনসার ও গ্রাম পুলিশ টাঙ্গাইল জেলা কমান্ডার কামরুজ্জামানের নামে ২২.১২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়। এই বরাদ্দের ১৬ মেট্রিক টন (প্রায় ৫৩৩ বস্তা) চাল টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী মেসার্স নিলয় ট্রেডার্স এর মালিক মো. আমিনুল ইসলামের কাছে বিক্রি করেন। পরে সেই চাল কিনে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের মরিচা কোনপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মো. জামিনুর রহমান নিজের গুদামে মজুদ করেন।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এই চাল বীরগঞ্জ উপজেলার জন্য বরাদ্দকৃত নয়, তাই আমরা এর দায়ভার নিতে পারি না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বীরগঞ্জ থানার ওসি-কে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর বর্মন জানান ,অভিযানে জব্দ করা প্রতিটি চালের বস্তায় ‘খাদ্য অধিদপ্তর এবং নেট ওজন ৩০ কেজি’ লেখা ছিল। তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি জানান, টাঙ্গাইল জেলা আনসার বাহিনীর নামে ডিও কাটা এসব চাল সরকারিভাবে বরাদ্দ করা হয়েছিল। টাঙ্গাইলের নিলয় ট্রেডার্স থেকে এসব চাল মোমো ট্রেডার্সের মালিক জামিনুর রহমান অবৈধভাবে ক্রয় করে তার গুদামে রাখেন। সরকারি ভাবে ওএমএস কার্যক্রমে ব্যবহারের কথা থাকলেও চালগুলো অবৈধভাবে মজুত করা হয়েছে। চালগুলো সরকারি বস্তা পরিবর্তন করে বাজারে বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।