
ক্রিকেট খেলতে শিবনারায়ণ চন্দরপল বাংলাদেশে এসেছেন অনেকবার। বাংলাদেশে টেস্ট আর ওয়ানডে সিরিজ খেলেছেন বেশ কয়েকবার, তবে কখনো আসা হয়নি সিলেটে। আসবেনও বা কি করে, তখন তো সিলেটে আন্তর্জাতিক মানের কোনো স্টেডিয়ামও ছিল না। শিবনারায়ণ না আসলেও সিলেট চন্দরপলের দর্শন পেয়েছে তার ছেলে ত্যাগনারায়ণের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে তিনটি চারদিনের ম্যাচ খেলতে সিলেটে ক্যারিবীয় ‘এ’ দল। সেই দলের অন্যতম সদস্য ত্যাগনারায়ণ।
মঙ্গলবার শুরু হওয়া সিরিজের প্রথম ম্যাচে বৃষ্টি বাধার আগে হেসেছে ত্যাগনারায়ণের ব্যাটও। বাবা শিবনারায়ণের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি ত্যাগনারায়ণের। বাবার ব্যাটিং শৈলীও ঠিকঠাক আয়ত্ত করেছেন তিনি। উইকেটে এসেই স্টাম্পের ওপরে থাকা বেলের ওপর ব্যাটের হাতল ঠুকে শিবনারায়ণ যেমন গার্ড নিতেন, ত্যাগনারায়ণও তা-ই। সিলেটের বাইশগজে এমনটা পরিলক্ষিত হয়েছে বারবার। যখনই ননস্ট্রাইক থেকে স্ট্রাইকে ফিরেছেন তখনই যেন বেলের ওপর ব্যাটের হাতল ঠুকেই প্রস্তুত হয়েছেন টাইগার বোলারদের মোকাবেলার।
শিবনারায়ণ উইকেটে দাঁড়াতেন নব্বই ডিগ্রি কোণে স্ট্যান্ট নিয়ে। বাবার মতো অতটা ভুতুড়ে ব্যাটিং স্ট্যান্ট নেই ত্যাগনারায়ণ, তারপরও যেন কিছুটা শিবের স্ট্যান্টস ছাপ রয়েছে তার ব্যাটিং স্ট্যান্ট। ক্যারিবীয় জার্সি গায়ে ইতিমধ্যে বাবাকে ছাড়িয়ে গেছেন ত্যাগনারায়ণ। নিজের তৃতীয় টেস্টে করে বসেন ডাবল সেঞ্চুরি। যেখানে তার বাবা প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান ১৯তম টেস্টে আর প্রথম ডাবল আসে ৮১তম টেস্টে। রেকর্ডবুকে বাবাকে ছাপিয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখা ত্যাগনারায়ণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দলে নিজের জায়গা করেছেন পাকাপোক্ত।
এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের হয়ে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে খেলছেন সিলেটে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম ম্যাচে বেশ সফল ক্যারিবীয় কিংবদন্তি শিবনারায়ণের ছেলে। শেষ বিকেলে বৃষ্টি বাধার আগে খেলেছেন ১৯০ বলে অপরাজিত ৭০ রানের ধৈর্য্যশীল এক ইনিংস।
বাবার মতো বেশ ধৈর্য্যশীল ত্যাগনারায়ণ, রয়েসয়ে খেলার ধীর মনোবলে উইকেটে ছিলেন অবিচল। কোনো রকম বাড়তি চাপ নেন, রান তুলতে তড়িঘড়ি করেননি। দেখেশুনে খেলে তাই দিন শেষে অপরাজিত আছেন ৭০ রানে।
ত্যাগনারায়ণের দিনে ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ক্যারিবীয় ওপেনার কির্ক ম্যাকেঞ্জিও। চন্দরপলকে নিয়ে প্রথম ব্যাট করতে নেমে ম্যাকেঞ্জি উদ্বোধনী জুটিতে ৪০ ওভারে গড়েন ১৩০ রানের জুটি। ১২৪ বলে ১১ চার এবং ১ ছক্কায় ৮৬ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেন ম্যাকেঞ্জি। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বোলারদের জন্য যখন উইকেট সোনার হরিণে পরিনত হয়েছে, তখনই অধিনায়ক আফিফ হোসেন বল তুলে দেন সাইফ হাসানের হাতে। পার্ট টাইমার হিসেবে হাত ঘুরাতে এসে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সাইফ। দলীয় ১৩০ রানে ম্যাকেঞ্জিকে (৮৬) রানে ফিরিয়ে ভাঙেন সেই জুটি।
তিনে নামা রেমন রেইফার শুরুতেই হাত খুলে ব্যাট চালান। বেশি আক্রমনাত্মক হতে গিয়ে ক্যারিবীয় এই ব্যাটার ফিরেছেন ব্যক্তিগত ২৬ রানে। উইকেটের পিছনে জাকের আলি অনিকের ক্যাচ বানিয়ে তাকে সাজঘরে পাঠান তরুণ পেসার মো. মুশফিক হাসান।
বাংলাদেশী বোলারদের সাফল্য বলতে এই দুই উইকেটই। এরপর দিনের বাকী অংশ কাটিয়ে দেন ত্যাগনারায়ণ ও অ্যালিক স্টিভেন আথনাজে মিলে। চা বিরতির আগে ত্যাগনারায়ণ পেয়ে যান ফিফটি। দিন শেষে দুজনে অপরাজিত আছেন যথাক্রমে ৭০ ও ৩৫ রানে।
দিনের শেষ দিকে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায় নির্ধারিত সময়ের আগে। ফলে ৬৮ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল দিন শেষ করে ২ উইকেটে ২২০ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন সাইফ হাসান ও মুশফিক হাসান।