গাছের ফাঁক দিয়ে শেষ বেলার সূর্যের আলো। মাথার উপর বড় বড় গাছ যেন সবুজের ছাদ। ঘড়ির কাটায় তখন পাঁচটা গড়িয়ে গেল। নতুন নতুন কাপড়ে নানা বসয়ী মানুষের ভিড়। কয়েকজন স্টলে স্টলে নতুন বই খুঁজলেও তরুণ-তরুণীসহ বেশিরভাগ দর্শনার্থী ব্যস্ত ছবি তুলতে। কেউ বই হাতে নিয়ে, কেউ আবার প্রিয়জন বা বন্ধুর সঙ্গে। অনেকে ছবি তুলছেন নান্দনিক স্টলকে পেছনে রেখে।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি শিরীষলায় অমর একুশে বইমেলায় গিয়ে এসব দৃশ্য দেখা যায়।
ছুটির দিন হওয়ায় মেলা প্রাঙ্গণে বইপ্রেমি-পাঠকের পাশাপাশি দর্শনার্থীর উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। এদের মধ্যে অনেকে মোবাইলে সেলফি ও ছবি ধারণ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এমনি মেলার শিরীষতলা স্থাপন করা বঙ্গবন্ধু ও ভাষা শহিদদের ছবির সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে লাইন অনুসরণও করেছেন।

স্বামীকে দিয়ে নিজের ছবি মোবাইলের ফ্রেমবন্দি করছেন শারমিন জাহান। ছবি তোলা শেষে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’দেখুন মেলায় সবাই বই কিনতে আসে এমন না। সিআরবি জায়গাটি আগে থেকেও সবার প্রিয়, তার সঙ্গে এবার এখানে বইমেলা। বলতে গেলে পরিবেশটা অন্য রকম। এখানে এসে কার না ছবি তুলতে লোভ করবে না! আমিও তাই কয়েকটি ছবি তুলে রাখছি।’

মেলার নালন্দা প্রকাশনীর সামনে বন্ধুকে হাতে ফোন দিয়ে ছবি তুলাচ্ছেন সিটি কলেজের ছাত্র জাহিদুল করিম। জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পরিবেশটা সুন্দর, তাই আমরা ছবি তুলছি। তাছাড়া এসব ছবি ফেসবুকে আপলোড করব। যার মাধ্যমের মেলার প্রচার বাড়বে।’
এদিন বিকেল পাঁচটায় বইমেলা উদ্বোধনের কথা জানালেও প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় দেরিতে সন্ধ্যায় মেলার উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

চসিকের আয়োজনে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতায় এ বইমেলা হচ্ছে। ৪৩ হাজার বর্গফুটে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৯২টি প্রকাশনা সংস্থার ১৫৫টি স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ডাবল স্টল ৭৮টি, সিঙ্গেল ৭৭টি। এবারের বইমেলার বাজেট ৫০ লাখ টাকা। এবারও জাতীয় জীবনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে সম্মাননা স্মারক পদক ও সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হবে।
এবারের আয়োজনের ২৩ দিনজুড়ে রবীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লোক উৎসব, মরমি উৎসব, বসন্ত উৎসব, তারুণ্যের উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, শিশু উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, নারী উৎসব, চাটগাঁ উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কবিতা আবৃত্তি ও ছড়া উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, কুইজ প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, গুণিজন সংবর্ধনা, সম্মাননা পদক এবং সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।
আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে।