গর্বের আরেকটি পালক যুক্ত হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মুকুটে। জবির সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী সাবিতা বিনতে আজাদ শিফা জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেত্রীর তালিকায়।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন ‘রোসাটম’-এর অধীন প্রতিষ্ঠান ‘অবনিন্সক টেক একাডেমি’ আয়োজিত ‘ভিজিবল পাওয়ার ফিমেল লিডারশিপ’ ক্যাটাগরিতে তাকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়। বিশ্বব্যাপী হাজারও আবেদনকারীর মধ্য থেকে কঠোর বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিফাকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তার পূর্ববর্তী কর্মঅভিজ্ঞতা, স্বেচ্ছাসেবামূলক উদ্যোগ, অর্জিত পুরস্কার ও গবেষণা কার্যক্রম এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিফা অংশগ্রহণ করবেন রাশিয়ার ওয়ার্ল্ড অ্যাটমিক উইক এবং আন্তর্জাতিক নারী নেতৃত্ব কর্মশালা ‘ফিমেল লিডারশিপ ক্যাম্প’-এ, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ১০ হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। ক্যাম্পটি পারমাণবিক শিল্পের ৮০ বছরের সাফল্য উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত হবে।
সাবিতা বিনতে আজাদ শিফা এর আগে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস)-এ প্রভাষক হিসেবে কাজ করেছেন। পাশাপাশি, ওয়ার্ল্ড ভিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অধীনে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ‘রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রকল্প’-এ গ্রান্ট অ্যাকুইজিশন ম্যানেজমেন্টের লিড প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানে তিনি তরুণদের সফট স্কিল ও যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছেন এবং গড়ে তুলেছেন ‘ভিলেজ ইমপাওয়ারমেন্ট’ নামের একটি সংগঠন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের এক লাখ শিক্ষার্থীকে কমিউনিকেশন, প্রেজেন্টেশন ও স্পিকিং দক্ষতায় পারদর্শী করে গড়ার লক্ষ্য নিয়েছেন তিনি। রাশিয়ার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সম্মানজনকভাবে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা রয়েছে শিফার। তিনি ভারতের মেঘালয়ের নর্থ-ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটিতেও গবেষণা সংক্রান্ত কাজে যুক্ত ছিলেন।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোচিতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভালে বাংলাদেশের ৮৫ তরুণ-তরুণীর প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন তিনি। এছাড়া ২০২৪ সালের মে মাসে মস্কোতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস কমিটিতে বাংলাদেশের হেড হিসেবে নেতৃত্ব দেন এবং একই বছরের অক্টোবরে ওরেনবুর্গে ইউরেশিয়া গ্লোবাল সম্মেলনেও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০১৯-২০ সালে টোস্টমাস্টার্স ইন্টারন্যাশনালের আয়োজিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব পাবলিক স্পিকিংয়ে আন্তর্জাতিক বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হন তিনি এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সেমিফাইনালেও অংশ নেন।
শিফা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাডভান্সড টোস্টমাস্টার্স ক্লাবের নারী সভাপতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে দুটি ক্লাবের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারত ও নেপালে আন্তর্জাতিক বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে নেপালের লাক্সমি ব্যাংকে বক্তব্য রাখেন। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভাল কর্তৃক প্রতিনিধিত্বকারী ‘ন্যাশনাল প্রিপারেটরি কমিটি অব বাংলাদেশ’-এর শিশু কমিটির প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে শিফা বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য। আমি ইতোমধ্যে অনেক কাজ করেছি, সামনে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চাই। আমাদের দেশে কমিউনিকেশন ও স্পিকিং স্কিল নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে, আমি সেটার উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই।
শিফার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরে। তার বাবা ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ, যিনি জাতিসংঘের স্কলারশিপে দু’বার উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং মস্কোর পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া (লুমুম্বা ইউনিভার্সিটি) থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। মা সোহরাত বেগম ছিলেন গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।