বাবা মুক্তিযোদ্ধা হলেও চাচাকে পিতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আত্মসাৎ

বাবা মুক্তিযোদ্ধা হলেও চাচাকে পিতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আত্মসাৎ

জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বাবার নাম বদল করে প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা চাচার সম্মানী ভাতা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে ভাতিজার বিরুদ্ধে। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন ওই ভাতিজা। তার দাবি, ভুয়া এনআইডি করে সম্মানী ভাতা তুলতেন তিনি। এ জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে মাসোয়ারা দিতেন তিনি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেই সচিব। ঘটনাটি উপজেলার বাগানবাজার ইউনিয়নের।

বাবা মুক্তিযোদ্ধা হলেও চাচাকে পিতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আত্মসাৎ

ওই মুক্তিযোদ্ধার নাম বসু মিয়া। মারা যাওয়া এ মুক্তিযোদ্ধার কোনো সন্তান নেই। অভিযুক্ত আবদুস শুক্কুর (৪৬) বসু মিয়ার ভাতিজা। পেশায় গ্রাম পুলিশ শুক্কুরের বাবা আব্দুর রাজ্জাকও একজন মুক্তিযোদ্ধা। রাজ্জাকের ছয় সন্তানের মধ্যে শুক্কুর তৃতীয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চিকনছড়া গ্রামের বাসিন্দা শুক্কুর ২০০৮ সালে এনআইডি পান। ২০১৪ সালে চাচা বসু মিয়াকে বাবা সাজিয়ে তৈরি করেন আরও একটি এনআইডি। এ এনআইডি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলছেন তিনি। ভুয়া এনআইডি তৈরির পেছনে রয়েছে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক শহিদুল ইসলাম ভুঁইয়া, যার বড় ভাই নির্বাচন কমিশনার সহকারী সচিব নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া।

এক ব্যক্তির দুই এনআইডি জালিয়াতির অনুসন্ধ্যানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য। ভুয়া এনআইডিকে পুঁজি করে ইউনিয়ন পরিষদের জাল ওয়ারিশ সনদ নিয়ে শুক্কুর বনে যায় সন্তানহীন মুক্তিযোদ্ধা বসু মিয়ার একমাত্র সন্তান। যার বদৌলতে ২০১৫ সাল থেকে শুক্কুর উত্তোলন করে আসছেন বসু মিয়ার নামে আসা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। যার ভাগ পান যায় ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বখতিয়ার উদ্দিন, শহিদুল ইসলাম ভুঁইয়া, ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ আরও কয়েকজন।

শুক্কুর বলেন, ‘আগে আমার এনআইডি একটি ছিল। পরে আরেকটি এনআইডি তৈরি নিয়ে শহীদুলের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। সেই এনআইডিতে চাচাকে বাবা বানানো হয়। শহীদুল, সচিব ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকেও মাসে মাসে টাকা দিতাম।’

অভিযোগের বিষয়ে শহীদুল বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে শুক্কুরের জায়গা নিয়ে ঝামেলা রয়েছে। তাই এমন মিথ্যা কথা বলছে। আমি এনআইডি তৈরি করেনি, টাকাও নেয়নি।’

ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. ইলিয়াছ বলেন , ‘আমি কমান্ডার হয়েছি ২০২১ সালে। যেহেতু বসু মিয়া মৃত তাই এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’

এদিকে ইউনিয়ন সচিব বখতিয়ার উদ্দিনের মন্তব্য নিতে ইউনিয়ন কার্যালয়ে যান এ প্রতিবেদক। এ সময় সচিবের অফিসে কক্ষে বিভিন্ন সনদপত্র ও নথি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। যে যার মতো করে সেখান থেকে নিয়ে যাচ্ছে চাহিদামতো সনদ। সেখানে দেখা হয় বখতিয়ারের সঙ্গে। শুক্কুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এনআইডি কার্ড করে দেওয়ার কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত না। ’

কিন্তু এ প্রতিবেদকের হাতে আসা তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইউপি সচিব গ্রাম পুলিশ শুক্কুরকে রক্ষার্থে পরিষদের প্রশাসকের স্বাক্ষারবিহীন নতুন আরেকটি প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করেছেন। যেখানে সচিব, ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ও মহিলা ইউপি সদস্যা শাহেনা বেগমের স্বাক্ষর রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইউএনওর নির্দেশে দুই ইউপি সদস্যের স্বাক্ষরে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে।’

ইউপি সদস্য শাহেনা বেগম বলেন, ‘এখন যেহেতু চেয়ারম্যান নেই, তাই পরিষদে গেলে সচিব আমাদের থেকে স্বাক্ষর নেয়।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম মেম্বার বলেন, ‘সচিবের এসব অনিয়মের বিষয়ে আগামী মাসিক সভায় ইউনিয়নের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হবে।’

একজনের দুটি এনআইডি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অরুণ উদয় ত্রিপুরা বলেন, ‘ইতোমধ্যে ওই দুটি এনআইডি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি: এত স্বর্ণ সঙ্গে রাখার কারণ জানা গেল

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাগান বাজার ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরেছি। অনুসন্ধান করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্র : যুগান্তর

Scroll to Top