বয়স হয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুড়িয়ে যাচ্ছে ত্বক। রূপচর্চা করে, নিয়মিত যত্ন নিয়ে ত্বককে কিছু বেশি সময়ের জন্য সতেজ রাখা যায় বটে, তার বয়স তো ঠেকানো যায় না! তবে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ত্বকের কোষগুলির বয়স কমিয়ে আনার কৌশল বার করা গিয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের দাবি। সম্প্রতি একটি গবেষণায় তেমন ইঙ্গিতই পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বয়স্কদের শরীরে তরুণের রক্ত কিংবা তরুণের শরীরে বয়স্ক কারও রক্ত প্রবেশ করালে কী হয়, আদৌ রক্তের ক্ষেত্রে বয়সের পার্থক্য থাকে কি না, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই গবেষণা চলছে। সম্প্রতি জার্মানির এক দল বিজ্ঞানী এই সংক্রান্ত গবেষণায় সাফল্য পেয়েছেন। গবেষণার ফল দেখে তাঁরা বিস্মিত। দাবি, ত্বকের বয়স কমে আসার লক্ষণ দেখা গিয়েছে তাঁদের পরীক্ষায়। যদিও এ নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন, মানছেন অনেকেই।
জার্মানির বেইয়ের্সডর্ফ এজি সংস্থার বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে মানুষের ত্বকের একটি মডেল তৈরি করেছিলেন। সেই ত্বকের কোষগুলিতে প্রবেশ করানো হয় তরুণ রক্তের সিরাম (রক্তরস)। প্রাথমিক ভাবে এতে ত্বকের কোষে কোনও পরিবর্তন চোখে পড়েনি। কিন্তু এর পর ওই পরীক্ষায় যোগ করা হয় অস্থিমজ্জা কোষ (বোন ম্যারো সেল)। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এর পরেই ওই ত্বকের কোষে বয়স কমার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এর থেকে মনে করা হচ্ছে, অস্থিমজ্জা কোষের সঙ্গে তরুণ রক্তের সিরাম বিশেষ পদ্ধতিতে সংযুক্ত হয়। তাতে কোষের বয়স কমার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
জার্মানির বিজ্ঞানীরা গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘‘ত্বক আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। বার্ধক্য নিয়ে গবেষণা করার জন্যেও ত্বক সবচেয়ে উপযোগী। বার্ধক্যের লক্ষণগুলি ত্বকেই সবচেয়ে আগে ধরা পড়ে। মানুষের সার্বিক স্বাস্থ্য তাঁর ত্বকে প্রতিফলিত হয়।’’ ত্বকের টিস্যুর বয়স নির্ধারণ করতে বিজ্ঞানীরা ডিএনএ মিথাইলেশন এবং কোষের বিস্তার পরিমাপ করে দেখেছেন। তরুণ রক্তরসের সঙ্গে অস্থিমজ্জা কোষের সংস্পর্শে ত্বকের বয়স হ্রাস পেয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অস্থিমজ্জা কোষের সংস্পর্শে এসে তরুণ রক্তরস ৫৫টি ভিন্ন ভিন্ন প্রোটিন তৈরি করেছে। তার মধ্যে অন্তত সাতটি যে কোনও ত্বকের তারুণ্যের জন্য উপযোগী। তবে এই প্রোটিনগুলি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, ‘‘গোটা প্রক্রিয়াটিতে আমরা বেশ কিছু প্রোটিনকে চিহ্নিত করেছি, যা আমাদের ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করার কারণ হতে পারে। বার্ধক্যের প্রেক্ষাপটে এগুলি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।’’
আয়ু বাড়াতে কিংবা যৌবন ফেরাতে রক্তের ভূমিকা রয়েছে বলে একটা ধারণা দীর্ঘ দিন ধরেই প্রচলিত। দেশে দেশে রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারদের কাহিনি সে সব ধারণার ভিত্তিতেই ডালপালা মেলেছে। এ সবের বৈজ্ঞানিক কোনও ভিত্তি এত দিন ছিল না। জার্মানির গবেষকেরা দেখালেন, ত্বকের যৌবন ফেরানোর ক্ষমতা থাকলেও থাকতে পারে রক্তের মধ্যে। বিজ্ঞানের দৌলতে এখন মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। মানুষ অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকছেন। ত্বকের তারুণ্য ফেরানোর এই গবেষণা ভবিষ্যতেও যদি সফল হয়, তবে তা আগামী দিনে বৃদ্ধ বয়সের সহায় হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। বার্ধক্য হয়ে উঠবে আরও সতেজ, আরও সবল।