আটমাস ধরে বন্ধ থাকা চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর মোড়ে চশমা খালের ওপর নবনির্মিত কালভার্টটি পূর্ণাঙ্গভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে। পুরোদমে শুরু হয়েছে কালভার্টের ওপর দিয়ে মুরাদপুর-অক্সিজের সড়কের যান চলাচল। এরইমধ্যে দিয়ে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলাসহ উত্তর চট্টগ্রামের লাখো মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটেছে।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ কালভার্টটি উদ্বোধন করেন। এরপর সন্ধ্যা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
এর আগে, চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি মহানগরীর মুরাদপুর মোড়ে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কালভার্টটি ভাঙা শুরু হয়। ওইদিন থেকে সাময়িক বন্ধ রাখা হয় মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়কে যান চলাচল। এতে সড়কটি দিয়ে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় ও পথচারীরা।
সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, চট্টগ্রাম থেকে যেন জলাবদ্ধতা দূর হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নেন এবং সেটা সিডিএর মাধ্যমে নেন। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প দিয়েছেন সিডিএকে। বাংলাদশে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কাজটা করাচ্ছেন। শহরের পানি নিষ্কাশনে যে ড্রেন আছে তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত। শহরে খালসহ ১ হাজার ৬৮০ কিলোমিটার ড্রেন আছে। সিডিএ ৩১৪ কিলোমিটারে কাজ করছে। আমাদের অংশটা শেষ হলে মানুষের কষ্ট অনেক কমে আসবে। জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাবেন। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিটি কর্পোরেশনও কাজ করছে। সবগুলোর কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামবাসী জলাবদ্ধতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাবেন।
‘এ এলাকায় যারা বসবাস করেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা অনেকদিন কষ্ট সহ্য করেছেন। এখানে রাস্তা বন্ধ ছিল। ওয়াসার পাইপ ছিল। ওয়াসার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাস্তার কাজ শেষ করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) থেকে পবিত্র রবিউল আওয়াল মাস শুরু হবে। ১২ রবিউল আওয়াল যে জুলুস হয় তা এ রাস্তা দিয়ে যায়। আজ আমরা উদ্বোধন করে দিলাম, যাতে সুন্দরভাবে মিলাদুন্নবীর জুলুসটা যেতে পারে।
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম চোধুরী বার্তা.কমকে বলেন, অবশ্যই সিডিএকে ধন্যবাদ জানাবো। এই কালভার্টটি খুলে দেওয়ার মাধ্যমে যাত্রী ও পথচারীদের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর হয়েছে। সিডিএ সবসময় জনকল্যাণমুখী কাজ করে থাকে। কালভার্টটি নির্মাণের ফলে ওই স্থানের যে জলবদ্ধতার সমস্যা সেটিও আর হবে না।
সড়কটি দিয়ে চলাচল করা অক্সিজেন এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, দীর্ঘদিন কালভার্টের কাজের জন্য এই সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। যার কারণে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে আমাদের। অক্সিজেন থেকে গাড়ি এসে মুরাদপুর রেললাইনের সামনে যাত্রী নামিয়ে দিত, বাকি পথ হেটেই পার হতে হয়েছিল। আজকে আগের মতো মুরাদপুর মোড়ের ওই পাড়েও গাড়ি যাচ্ছে দেখে ভাল লাগছে। এখন আর গেটে যেতে হচ্ছে না।
আতুরারডিপো এলাকার বাসিন্দা জাহেদুল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, শহরের ব্যস্ততম এই সড়ক দিয়ে আক্সিজেন হয়ে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি জেলা ছাড়াও উত্তর চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি উপজেলার বাসিন্দারা চলাচল করেন। দীর্ঘদিন এই সড়কটি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন অন্তত লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হতো। এটি চালুর মাধ্যমে দীর্ঘ আটমাস পর এই ভোগান্তির অবসান হয়েছে। দু’পাশে পুরোদমে যানবাহন চলাচল করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কালভার্টটি নির্মাণে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ কোটি টাকা মূল ব্রিজ নির্মাণ এবং বাকি দেড় কোটি টাকা খরচ পাইপলাইন সরাতে। কালভার্টটির দৈর্ঘ্য ২১ মিটার এবং প্রস্থ ১০ মিটার। পথচারী চলাচলে কয়েকদিনের মধ্যে কালভার্টটিতে ফুটপাত করে দেওয়া হবে।
জানা গেছে, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নতুন কালভার্টটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এর আরো এক মাস পর ২৫ জুন কালভার্টটির আংশিক খুলে দেওয়া হয় যান চলাচলের জন্য। ঈদুল আজহার পর সেটা আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হয়, যা বুধবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সর্বশেষ শনিবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো।