৮ বছর আগে শখের বসে নিজ জমিতে ফলের গাছ লাগান। তিনি মনে মনে চেয়েছিলেন নিজ জমিতে বিভিন্ন জাতের ফলের গাছ থাকবে, হয়েছেও তাই।শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজের অবসর সময়টুকু নিজের সাত একর জমিতে লাগিয়েছেন দেশি-বিদেশি ১১৯ প্রজাতির ফলজ গাছ। তার গাছে এখন বাহারি রকমের ফল এসেছে। বলছিলাম টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর গ্রামের শিক্ষক শামসুল আলমের কথা।
শিক্ষক শামসুল আলম ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মৃত হেকমত আলীর ছেলে। কর্মরত আছেন ঘাটাইল এস.ই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ক শিক্ষক হিসেবে।
দেখা যায়, গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে ফুল আবার কোনো গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে দেশি-বিদেশি পরিপক্ক ফল ও ফলের গুটি। যে কারও চোখ জুড়াবে এ দৃশ্য দেখে। তার এ ফলের বাগান দেখতে নিজ জেলাসহ ভিড় করছেন অন্যান্য জেলার মানুষও। অনেকেই তার ফলের বাগান দেখে গড়ে তুলেছেন বাগান।
শামসুল আলম বলেন, আমার কৃষি কাজের প্রতি টান ছিল আগে থেকেই। আমি কৃষি বিষয়ক শিক্ষক। প্রথমে শুরুটা করেছিলাম শখের বসে এখন তা রূপ নিয়েছে পরিকল্পিত ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে। আমার বাগানের মোট জমির পরিমাণ সাড়ে সাত একর। আমার বাগান করার উদ্দেশ্য অন্য সবার চেয়ে আলাদা। আমার লাগানো ফলজ গাছে ফলে থাকবে না কোনো কেমিক্যাল। গাছে প্রয়োগ করা হবে না কোনো প্রকার ক্ষতিকর মেডিসিন। পোকা দমনে জৈব বালাই নাশকই হবে যথেষ্ট।
তিনি বলেন, ফল গাছ কেনা থেকে শুরু করে বেড়া দেওয়া সেচ যন্ত্র ক্রয়সহ এ পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা। ১১৯ জাতের ফল গাছে জৈবিক সারসহ পরিচর্চা বাবদ বছরে খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো। বাগান পরিচর্চার জন্য ১২ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন। এবছর বিভিন্ন জাতের ফল বিক্রি করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ হবে। এরই মধ্যে কমলা ৬০ হাজার টাকা, মাল্টা ৫০ হাজার, আম ৩৫ হাজার এবং লটকন বিক্রি করেছেন দুই লাখ টাকা। বাজারে এই ধরনের ফলের চাহিদাও রয়েছে খুব। এ বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। লটকন গাছ রয়েছে আড়াই হাজার। শতকরা ৮০ ভাগ গাছে লটকনের ফলন হয়েছে।
শামসুল আলম বলেন, ফলজ বাগান করতে গিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছে তাদের কথায় আমি কান দেয়নি।আমার স্বপ্ন ও নিজের প্রতি বিশ্বাস যার জন্য আজ আমি ১১৯ জাতের ফলজ গাছ লাগাতে পেরেছি। এবছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। যার জন্য লটকন গাছের বাগান করতে অনেকেই চারার অর্ডার করছেন। সারা বছর বাগানে দেশি-বিদেশি মিলে ৩০-৩৫ ধরনের ফল গাছে থাকে।
মূলত ভিন দেশি ফল চাষ করে আমাদের দেশে তার অভাব পূরণ করা। আর বিভিন্ন ধরনের কলমের মাধ্যমে এ গাছগুলোর বংশবিস্তার ঘটিয়ে অন্যান্য চাষিদের মাঝে তা ছড়িয়ে দেওয়া।
ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান জানান, শিক্ষক শামসুল আলমের বাগান পরিদর্শন করেছি।তিনি একজন ভালো শিক্ষক, পাশাপাশি ভালো উদ্যােগতা। আগে থেকেই মোটামুটি জৈব পদ্ধতিতে কিভাবে নিরাপদ ফল উৎপাদন করা যায়, সে বিষয়ে তিনি খুবই আগ্রহী। তিনি আশেপাশের কৃষকদের ফল চাষের জন্য উদ্ধুদ্ধ করে যাচ্ছেন। সাত একর জমিতে লটকনের পাশাপাশি ১১৯ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফলের গাছ রয়েছে তার বাগানে। আমরা প্রতিনিয়ত তার এ কাজে পরামর্শ এবং কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।