গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের দাবি শুধু একটি কাগুজে আবেদন নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম ভিত্তি। মানুষ যখন আন্দোলন করে, মানববন্ধনে দাঁড়ায় কিংবা স্মারকলিপি দেয়, তখন সেখানে থাকে তাদের বেঁচে থাকার আকুতি। উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের দাবির প্রতি সরকারের বাড়তি মনোযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে বাস্তবতা একেবারেই উল্টো। এখানে ন্যায্য দাবি জানানোর অপরাধে সাধারণ মানুষকে লাঠিপেটা, টিয়ারশেল, গরম পানি ঢেলে কিংবা নির্বিচারে গ্রেফতার-রিমান্ডের মুখোমুখি হতে হয়।


সাম্প্রতিক সময়ে যমুনার ভাঙনে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর, হরিরামপুর ও শিবালয়সহ নদী তীরবর্তী এলাকায় হাজারো মানুষ দিশেহারা। গত কয়েকদিনে শিবালয়ের ফেরিঘাট, ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিনই কারও না কারও ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
মানুষ প্রতিকার চাইছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে, বারবার আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু প্রতিকার না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছে। এ অবরোধ কোনো বিলাসিতা নয়, বরং জীবন রক্ষার লড়াই।
অন্যদিকে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা চলছে অব্যাহতভাবে। প্রশাসনের চোখের সামনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভারী খননযন্ত্র বসিয়ে বালু তুলছে, আর সেই বালু পাচার হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। নদী ভাঙনের অন্যতম কারণ এ বালু উত্তোলন। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসনের তৎপরতা প্রায় শূন্য। নদীভাঙন প্রতিরোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণ, ড্রেজিং বা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা তো দূরের কথা, স্থানীয় প্রশাসন ব্যস্ত ফুটবল টুর্নামেন্ট, নৌকা বাইচ ও মেলা আয়োজন নিয়ে।
এ যেন অমানবিক এক বিদ্রূপ। নদীভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষের চোখের জল, হাহাকার আর তীব্র দাবিকে অবহেলা করে রাষ্ট্র যদি বিনোদনকেন্দ্রিক আয়োজনেই ব্যস্ত থাকে, তবে এ দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রথম দায়িত্ব মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা করা। যমুনা ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
রাষ্ট্র নাগরিকের জন্য, নাগরিক রাষ্ট্রের জন্য নয়। তাই প্রশাসনের উচিত জনগণের কথা শোনা, মানুষের চোখের জল মুছে দেওয়া। অন্যথায় ক্ষুব্ধ জনতার আন্দোলনই হবে শেষ ভরসা—যা কারও কাম্য নয়।
লেখক- সিপন আহমেদ, সাংবাদিক।