জুমবাংলা ডেস্ক : ঈদুল আজহা সামনে রেখে চট্টগ্রামের বাজারে জমে উঠেছে মসলার কেনাবেচা। কোরবানির রান্না জমজমাট করতে দরকার যে সকল উপকরণ, তার বড় একটি অংশই মসলা। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বাড়ছে চাহিদা, বাড়ছে ভিড়। তবে সবখানে মিলছে না স্বস্তির হাওয়া। পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো কিছু প্রয়োজনীয় মসলার দাম কমলেও উচ্চমূল্যের এলাচ, জিরা, দারুচিনি ও লবঙ্গ এখনও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। ফলে মসলা বাজারে তৈরি হয়েছে মিশ্র চিত্রক।
দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫-৫০ টাকায়। দেশি আদা ৮৫-৯০ টাকা এবং চায়না আদা ১১০-১১৫ টাকা। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩২ টাকায়।
অন্যদিকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা, দেশি আদা ১২০ টাকা, চায়না আদা ১৪০ টাকা এবং রসুন ১৫০ টাকায়।
তবে জিরা, এলাচ, দারুচিনি, গোলমরিচের মতো দামি মসলায় নেই সেই স্বস্তি। এসব পণ্যে পাইকারি ও খুচরা দামের ব্যবধান অনেক বেশি।
চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে জিরা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০০ টাকায়, খুচরায় ৭০০-৭৫০ টাকা। দারুচিনি মানভেদে পাইকারিতে ৩৭০ থেকে ৪৫০ টাকা, খুচরায় ৫৫০ টাকা। এলাচ পাইকারিতে ৪২০০-৪৬০০ টাকা, খুচরায় ৪৮০০-৫২০০ টাকা। গোলমরিচ পাইকারিতে ১৩০০-১৩৮০ টাকা হলেও খুচরায় সাদা গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকায়।
এছাড়া লবঙ্গ কেজি প্রতি ১৪০০ টাকা, তেজপাতা ১৬০ এবং কালোজিরা ৪৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
দেশে কৃষিজাত পণ্যের বড় অংশ আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজের মাধ্যমে। আর আমদানির জন্য অনুমতি নিতে হয় বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে। সেই কেন্দ্রের তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গত ১০ মাসে দেশে মশলাজাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৩৪ মেট্রিকটন। এর মধ্যে রয়েছে আদা ২১ হাজার ১৯ টন, পেঁয়াজ ১৪ হাজার ৬৩ টন, রসুন ৯৯ হাজার ৮৫৮ টন, এলাচ ১৬১৪ টন, দারুচিনি ১০ হাজার ৫৪৩ টন, লবঙ্গ ২১৫৪ টন, জিরা ৩৭০২ টন, কালোজিরা ৭ টন এবং গোলমরিচ ১ হাজার টনসহ অন্যান্য মসলা।
মশলা গবেষণা কেন্দ্র বলছে, দেশের বাৎসরিক মসলা চাহিদা ৩৩ লাখ টন, যার মধ্যে ২৭ লাখ টন আসে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে। বাকি অংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ হয়।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে কিছু পণ্যের দাম কমলেও তারা এখনও বেশি দামে কিনছেন, ফলে খুচরায় দাম কমানো যাচ্ছে না। অক্সিজেন এলাকার এক বিক্রেতা বলেন, কাগজে দাম কমার কথা শোনা গেলেও বাস্তবে পাইকারিতে সেই সুবিধা পাচ্ছি না।
আতুরার ডিপোর ‘বিসমিল্লাহ স্টোর’-এর মালিক মো. মহসিন বলেন, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম এবার একটু কম আছে। তবে এলাচ-জিরার মতো মসলা আমরা কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা লাভে বিক্রি করি।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারকেরা জানান, এবার বেশি পরিমাণ মসলা আমদানি হয়েছে এবং বন্দরে খালাসে তেমন সমস্যা হয়নি। বাজারে যতটা পণ্য এসেছে, সেই অনুপাতে চাহিদা নেই। তাই দ্রুত বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীরা কম দামে ছাড়ছেন। এবারে কোনো পণ্য গুদামজাত করেও রাখা হয়নি। প্রশাসন তৎপর থাকায় দাম কিছুটা কম।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার-সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, বিভিন্ন কারণে খাতুনগঞ্জে বিক্রি কমে গেছে। তাই সরবরাহ বেশি থাকায় কিছু পণ্যের দাম কমছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেও দাম কমানো হচ্ছে।
হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, কয়েক বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজ-রসুন ও আদার বাজার নিম্নমুখী। বাজার একদম খারাপ। কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। সরবরাহ যথেষ্ট আছে, প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে পেঁয়াজ আসছে। পুরো বাজার দেশি পেঁয়াজে সয়লাব। বিদেশ থেকেও আদা-রসুন আমদানি হচ্ছে ভালোভাবে। বাজারে সংকট নেই, দাম বাড়ারও সম্ভাবনা কম।
বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি অমর কান্তি দাশ জানান, আমদানির জন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা থাকায় আমদানি বেড়েছে। বিশ্ববাজারেও দাম কম। তবে পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় সেভাবে কমেনি। এজন্য মনিটরিং জোরদার করা দরকার ছিল।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজুমারস এসােসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, দাম কিছুটা কমলেও এখনও অনেক মসলার দাম সাধারণ ভোক্তার নাগালের বাইরে। কারা কারসাজি করছে তা চিহ্নিত করে সরকারের উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। আদা, পেঁয়াজ কম হলেও মসলার বাজারে এবার বাড়তি দাম রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করেন এবং বাড়তি দামে বিক্রি করতেই চান। রাজনৈতিক অস্থিরতায় সাধারণ মানুষের নজরও বাজারের দিকে কম, তাই সুযোগ নিচ্ছে অনেকেই।
তিনি বলেন, প্রশাসনের মনিটরিং দুর্বল। বাজারে এক পাশের দাম আরেক পাশে ৫-১০ টাকা বেশি—এটা অস্বাভাবিক। বিশেষ করে বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামে প্রশাসনের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার। কিন্তু দেখা যায় তারা বেশি ব্যস্ত থাকেন প্রটোকল নিয়ে। ঢাকায় কেউ এলেই তাকে প্রটোকল দিতে ব্যস্ত থাকেন কর্মকর্তারা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, কেউ প্রতারণার শিকার হলে অভিযোগ দিলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমাদের অভিযান চলছে। সূত্র : বার্তা২৪.কম