পাট পাতার চা! গ্রিন টি-এর অভিনব রকমফের এনে চমকে দিলেন কলকাতার বিজ্ঞানীরা

পাট পাতার চা! গ্রিন টি-এর অভিনব রকমফের এনে চমকে দিলেন কলকাতার বিজ্ঞানীরা

কলকাতা: দেখতে একেবারে গ্রিন টির মতো। টালিগঞ্জের কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন এই পানীয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে পেটেন্টের জন্য করা হয়েছে আবেদন। তিনটি সংস্থার সঙ্গে এই চা প্রস্তুত ও বিপণনের চুক্তি। খুব শীঘ্রই বাজারে আসতে চলেছে পাট পাতার ‘চা’। বিজ্ঞানীদের আশা, পাট পাতার ‘চা’-কে আঁকড়ে ধরে ঘুরে দাঁড়াবেন পাট চাষীরা।

চা তো অনেক রকম খেয়েছেন। হালফিল গ্রিন-টি তে মজেছেন অনেকেই। ড্রইং রুমে বসে এবার গ্রিন টি-র মতোই আপনিও হয়তো চুমুক দেবেন পাট পাতার ‘চা’-এ। এই অভিনব আবিষ্কার এই বাংলাতেই। টালিগঞ্জের আইসিএআর নিনফেট (ICAR-NINFET)-এর বিজ্ঞানীরা পাট পাতাকে প্রক্রিয়াকরণ করে তৈরি করেছেন এই বিশেষ পানীয়।

কী ভাবে হবে এই পাট পাতার প্রক্রিয়াকরণ! প্রথমে পাট ক্ষেত থেকে সবুজ পাতা সংগ্রহ করা হয়। পাট গাছের ৪০ দিন নাগাদ প্রথম পাতা তোলা হয়। এর নাম লিভ হারভেস্টিং। জল দিয়ে সবুজ পাতা পরিষ্কার করা হয় জীবাণু মুক্ত করতে। পোশাকি নাম অর্গানিক ওয়াশ। পাতা ধোয়ার পর জল ঝরিয়ে নেওয়া হয় টিস্যু পেপারে। ছায়াতে রেখে দু’দিন শুকিয়ে নেওয়া হয়। আদর্শ তাপমাত্রায় পাতার প্রক্রিয়াকরণ বা ওভেন ড্রাই করা হয়। এইরকম পাটপাতাকে এয়ার টাইট করে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এরপর আদর্শ তাপমাত্রায় পাতার প্রক্রিয়াকরণ বা প্রসেসিং করা হয় যাকে হিট ট্রিটমেন্ট বলে। প্রক্রিয়াকরন করা পাতা-কে গুঁড়ো করা হয়। গুঁড়ো করা পাট পাতার চা ‘টি-ব্যাগে’ প্যাকিং করা হয়। পাট পাতার চায়ের টি ব্যাগ গরম জলে ডুবিয়ে রাখতে হয়। এ বার পাট পাতার চা পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।

পাট পাতার চা! গ্রিন টি-এর অভিনব রকমফের এনে চমকে দিলেন কলকাতার বিজ্ঞানীরা

পাট পাতার সঙ্গে কোন কিছু না মিশিয়েই চা তৈরি করেছেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা। তবে এলাচ ও দারুচিনি মিশিয়ে এই চা আরও উন্নত বা ফ্লেভার পরিবর্তন করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

পাট একসময় প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল ভারতবর্ষে। বাংলাতেও পাট চাষের রমরমা ছিল। হুগলি নদীর তীরে একের পর এক জুট মিল। সে সব দিন এখন অতীত। এখনও দেশের ৪০ লক্ষ কৃষক পরিবার সক্রিয়ভাবে পাট চাষে জড়িত। পাট থেকে দড়ি, ব্যাগ, চট, বস্তা এবং পাটকাঠি থেকে গৃহস্থালির জ্বালানি ও পান পাতার বরজ হয়। তবে পাটের চাহিদা কমে যাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন চাষীরা। ভারত-বাংলাদেশ তো বটেই ভিয়েতনাম ইন্দোনেশিয়া মিশর সুদান ও ব্রাজিলেও পাট চাষ হয়।

আরও পড়ুন: মাথায় কেবল ‘INDIA’, আর কাঁধে এবার বিরাট গুরুদায়িত্ব! পথে নামল এসএফআই

আরও পড়ুন: হাতের চ্যানেল খোলা হল, বাইপ্যাপ চলছে! কবে বাড়ি ফিরতে পারেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য?

পাট চাষের এই আন্তর্জাতিক বাজারকে লক্ষ্য করেই এগোতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের এই আবিষ্কারে প্রতি হেক্টরে ৫০০ কেজি পাটের পাতা সংগ্রহ করা হয়। যা থেকে একজন কৃষক প্রতি হেক্টর পাট চাষে অন্তত কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজার টাকা বেশি আয় করতে পারবেন। পাট পাতার এই ব্যবহারে অদূর ভবিষ্যতে পাট চাষে অর্থনীতির একটা নতুন দিগন্ত খুলতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিক নয়। পাট পাতায় চা পাতার মত এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। যা গ্রিন টির থেকেও অনেক বেশি বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। একইসঙ্গে চা পাতার ক্যাফিন ও টেনিন এর মত উত্তেজক উপাদান কার্যত নেই বললেই চলে কাঠ পাতায়। বরং পাট পাতায় রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ প্রতিষেধক মধুমেহ প্রতিষেধক নানা উপাদান।

Published by:Uddalak B

First published:

Scroll to Top