নেপালে বিলুপ্ত রাজতন্ত্র পুনরায় চালুর দাবিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ২ জন নিহত এবং ১১২ জন আহত হয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
;
রাজতন্ত্রপন্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কর্মকর্তাদের ওপর পাথর ছুঁড়তে শুরু করলে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং বাতাসে রাবার বুলেট ও তাজা গুলি ছুড়ে পাল্টা জবাব দেয়।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নিষিদ্ধ এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতে কারফিউ জারি করা হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশের মুখপাত্র দিনেশ কুমার আচার্য বলেন, নিহতদের মধ্যে একজন বিক্ষোভকারী ও একজন সাংবাদিক রয়েছেন। নেপালের এভিনিউজ টিভি জানিয়েছে, তাদের একজন সাংবাদিক একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
নেপাল পুলিশের আরেক মুখপাত্র শেখর খানাল জানান, বিক্ষোভকারীরা একটি ব্যক্তিগত বাড়ি ও একটি গাড়িতে আগুন দেয়। সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৭ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তিন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।
২০০৬ সালে নেপালের রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ ব্যাপক রাজপথ বিক্ষোভের মুখে তার কর্তৃত্ববাদী শাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং দুই বছর পর ২০০৮ সালে সংসদ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করার পক্ষে ভোট দেয়। নির্বাচনের মাধ্যমে ২৩৯ বছরের রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে নেপাল হিন্দু রাজ্য থেকে ধর্মনিরপেক্ষ ফেডারেল প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়।
তখন থেকে নেপালের শেষ রাজা ৭৭ বছর বয়সী জ্ঞানেন্দ্র কাঠমান্ডুর বাড়িতে সাধারণ নাগরিক হিসেবে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন। রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর থেকে গত ১৬ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠন হয়েছে। তবে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার বিরাজ করছে ফলে প্রভাব পড়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শাহকে রাজা হিসেবে পুনর্বহাল এবং হিন্দুধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ফিরিয়ে আনার দাবি ক্রমবর্ধমান হচ্ছে। রাজতন্ত্রবাদী গোষ্ঠীগুলো দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে দুর্নীতি এবং ব্যর্থ শাসনব্যবস্থার জন্য অভিযুক্ত করেছে। মানুষ রাজনীতিবিদদের প্রতি হতাশ বলে তারা দাবি করেছে।
জ্ঞানেন্দ্র, যিনি সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপনের জন্য রাজপ্রাসাদ ছেড়েছিলেন, তিনি রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহ্বান সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। ক্রমবর্ধমান সমর্থন সত্ত্বেও সাবেক রাজার অবিলম্বে ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম।