নিউ ইয়র্কে দু’দিনব্যাপী উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসব অনুষ্ঠিত – DesheBideshe

নিউ ইয়র্কে দু’দিনব্যাপী উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসব অনুষ্ঠিত – DesheBideshe

নিউ ইয়র্ক, ০৯ মে – উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসব শেষ হয়েছে। যেমন ছিল শুরু তেমন হলো শেষ। ঐতিহাসিক এ ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে থাকলেন কয়েক হাজার নগরবাসী। স্বাক্ষী থাকলেন বিভিন্ন দেশ থেকে আগত শতাধিক অতিথি।
শনিবার (৬ মে) নিউ ইয়র্কের নন্দন কাননে (জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টার দু’দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত সঙ্গীতজ্ঞ ড. রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।

৬ মে শনিবার বেলা ১১টায় প্রথম দিনের অনুষ্ঠান উদ্ধোধন করেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক প্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ড. নুরুন নবী। এ সময়ে জ্যামাইকা পার্ফমিং আর্ট সেন্টার জ্যাপেকের উন্মোক্ত প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় অ্যামেরিকান বাংলাদেশী আর্টিস্ট ফোরামের ‘শিল্পীর চোখে রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক’ আয়োজন। অনুষ্ঠানের উদ্ধোধন করেন খুরশিদ আলম সেলিম। একই সাথে চলে শিশুদের চিত্রাঙ্কন। এরপর দিনব্যাপী আয়োজনের শুরুতে ছিলো রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। উদ্ধোধন করেন মতলুব আলী। আলোকচিত্রে শান্তিনিকেতন, শিল্পী ড. ওবায়দুল্লাহ মামুন। রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলার ওপর তথ্যচিত্র “রুপের অতীত রুপ” প্রদর্শিত হয় বেলা সাড়ে ১১টায়। পরিচালনায় ছিলেন সনাৎ মহান্ত। দুপুর সাড়ে ১২ সুমন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় প্রদর্শিত হয় চলচিত্র “শেষের কবিতা”।
বিকেল ৩টায় ড. রে্জওয়ানা চৌধুরী বন্যা অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পীভাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডা. মো: মনিরুল ইসলাম (বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল). রনধীর জয়সুয়াল (ভারতের কনসাল জেনারেল), ড. পবিত্র সরকার. চন্দ্রীল ভট্টাচার্য, আহকাম উল্লাহ, ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, হাসান ফেরদৌস, রনদেব সরকার ও রাহাত হোসেন নাজু।

বিকেল সাড়ে ৩টায় উদ্বোধনী সঙ্গীতে ছিলো শতকন্ঠে রবীন্দ্রনাথ। বিশেষ উপস্থিতি ছিলেন রেজওয়না চৌধুরী বন্যা। পরিচালনা করেন মহিতোষ তালুকদার তাপস। বিকালে আরো ছিলো মঞ্চ নাটক, মিছে কোলাহল, সংগীতানুষ্ঠান, “ভিনদেশীর চর্চায় রবীন্দ্রনাথ”। মঞ্চ নাটক, রক্তকরবী। নৃত্যনাট্য-তাসের দেশ (ইংরেজীতে)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ফিকশন-নন ফিকশন প্রেমের আখ্যান, ‘কার মিলন চাও বিরহী’। প্রথমদিনের আরো অনেক আকর্ষনীয় অনুষ্ঠান পরিবেশন শেষে রাত ৯টায় ছিলো ভারতীয় জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী শ্রেয়া গুহ ঠাকুরতা একক রবীন্দ্র সংগীতের আয়োজন।

অনুষ্ঠানের বিভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থিত ছিলেন একুশ পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী, ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাষাবিজ্ঞানী ড. পবিত্র সরকার, ভারতীয় লেখক আলোলিকা মুখোপাধ্যায়, ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও বক্তা চন্দ্রিল ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের স্বনামখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের বংশধর, শিল্প-ইতিহাসবিদ, খ্যাতিমান গ্যালারিস্ট সুন্দরম ঠাকুরকে উৎসবে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও ভারত, বাংলাদেশ, ব্রিটেন, জার্মানী, কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত: ২৫টি অঙ্গরাজ্য থেকে কবি, লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, কলাকুশলী ও রবীন্দ্র অনুরাগীরা অংশ নেন। বাংলাদেশি, ভারতীয়দের অন্তত: ১৫টি সংগঠন উৎসবে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে ভিন্ন ভাষাভাষী বিদেশি সংগঠনও পারফর্ম করেন।
নোবেলজয়ী প্রথম বাঙালি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন, চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ অভিবাসী জীবনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যই মূল লক্ষ্য বলে জানান আয়োজকবৃন্দ। প্রথম দিনের রবীন্দ্র উৎসবে অনেক কিছুই ছিল ব্যতিক্রমী আয়োজন যা উৎসবকে ভিন্নমাত্রা এনে দেয়।
প্রথম দিনের উৎসবে বাংলাদেশি আমেরিকান শিল্পীরা রবি ঠাকুরকে শৈল্পিকভাবে তুলে ধরেন তাদের চারুশিল্পের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব আঁকা ছবিও প্রদর্শনী হয়। উৎসব প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয় রবি ঠাকুরের একটি ভাস্কর্য। নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ তর্কে-বিতর্কে এবং বিদেশিদের চোখে রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম দিনের উৎসবে সুমন মুখোপাধ্যায়ের চলচ্চিত্র ‘শেষের কবিতা’ এবং ‘তাসের দেশ’ ও ‘রক্ত করবী’, ‘ভানু সিংহের পদাবলী’ গীতি নৃত্যনাট্য নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়। স্ত্রীর পত্র ও মিছে কোলাহল নামে দুটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন নিউ ইয়র্কের শ্রী চিন্ময় সেন্টারের তিরিশজন বিদেশি শিল্পী।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি, শ্রেষ্ঠ চরিত্রগুলো নিয়ে প্রীতি বিতর্ক, রবি ঠাকুরের জীবনে নারীর ভূমিকা শীর্ষক দুটি অনুষ্ঠান ‘ওরা সন্ধ্যার মেঘমালা’ এবং ‘কার মিলন চাও বিরহী’ পরিবেশিত হয়।
শনিবার দুপুরে সাহিত্য একাডেমির সহযোগিতায় রবীন্দ্র সাহিত্য সম্মেলনের উদবোধন করেন জোতিপ্রকাশ দত্ত। প্রধান অতিথি ছিলেন ড নুরুন নবী। মৃদুল আহমেদের উপস্থাপনায় আমার রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন সোনিয়া কাদের, এবিএম সালেহ উদ্দিন, পলি শাহিনা, আবু সাঈদ রতন, লায়লা ফারজানা ও শেলী জামান খান। রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান ও চিন্তাহম নিয়ে আলোচনা করেন ড আশরাফ আহমেদ। সঙ্গীত ও কথামালায় রবীন্দ্রনাথের বাউল গানের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন মাহমুদ হোসেন দুলু, গীতাঞ্জলী ও নোবেল নিয়ে আলোচনা করেন সউদ চৌধুরী, আব্দুল্ললাহ জাহিদ আলোচনা করেন আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ। মনিজা রহমানের উপস্থাপনায় রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র নিয়ে আলোচনা করেন মঞ্জুর আহমেদ।

মনজুর কাদেরের পরিচালনায় কবিতা পাঠে অংশ নেন-শামস আল মমীন, কাজী আতিক, রানু ফেরদৌস, ফারহানা ইলিয়াস তুলি, নীরা কাদরী, এইচবি রিতা, রওশন হাসান, খালেদ শরফুদ্দিন, শামস চৌধুরী রুশো, ইশতিয়াক আহমেদ রুপু, নোয়ার সেলিম, সুরীত বড়ুয়া, বেঞ্জির শিকদার, সালেহীন সাজু, লুৎফা হক ও তাহমিনা খান, ফারহানা হোসেন, ভায়লা সালিনা, সোহানা নাজনীন, সবিতা দাস, মিয়া আস্কির, সুলতানা ফিরদৌসী, রুপা খানম ও তামান্না আহমেদ।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিন দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হলেও সবার শেষে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করায় উপস্থিত দর্শকদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই কাছেই এ বিষয়টি দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে জানা গেছে।

দ্বিতীয় দিনের আয়োজন শুরু হয় ৭ মে রোববার বেলা ১১টায়। শুরুতেই ছিল চারুশিল্পের প্রদর্শনী ও শিশুদের চিত্রাঙ্কন। বেলা ১১ থেকে দুপর দুটো পর্যন্ত চলে রবীন্দ্র সাহিত্য সম্মেলন। প্রধান অতিথি ছিলেন আলোলিকা মুখোপাধ্যায় (ভারত) ও বিশেষ অতিথি পুরবী বসু (বাংলাদেশ)।
হাসান ফেরদৌসের পরিচালনায় ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, তমিজ উদ্দীন লোদী ও ফকির ইলিয়াস। সাহিত্য আয়োজনে আরো থাকবে নিউ ইয়র্কের আবৃত্তি শিল্পীদের পরিবেশনায় আবৃত্তি অনুষ্ঠান ‘রবিবার’ সমন্বয়কারী হিসেবে ছিলেন আবীর আলমগীর। দুপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষীপ্ত জীবনী: প্রবাসে রবীন্দ্রনাথ চর্চা ডকুমেন্টারি প্রতিবেদন। পরিচালনায় ছিলেন ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
শেষদিনের অনুষ্ঠানমালায় আরো ছিলো সেমিনার: রবীন্দ্রনাথ- তর্কে বিতর্কে। আলোচক, বিশ্বভারতীর সাবেক উপাচার্য ড. পবিত্র সরকার, মনজুর আহমদ, ও পুরবী বসু। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রীর পত্র গল্প অবলম্বনে ইংরেজী মঞ্চ নাটক “মৃনালের পত্র”। বিকেলে রবীন্দ্রসংগীতের শান্ত্রীয় ধারা : রবীরাগ। পরিচালনায় কাবেরী দাস। সংগীতানুষ্ঠান ঐ মহামানব আসে। পরিবেশনায় প্রকৃতি-নিউ ইয়র্ক। “ রবীর কির্তন” রবীন্দ্র সংগীতের কির্তনের ধারা। পরিবেশনায় ছিলেন ড. সাহানা ভট্টাচার্য। অ্যামেরিকায় রবীন্দ্রনাথের অবস্থান করা বাড়ির ক্রেতা বাঙালি দম্পতি কাজল মুখোপাধ্যায় ও মৌসুমী দত্ত রায়কে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় ছিলো সংগীতানুষ্ঠান। পরিবেশনায় সুরের ধারা ( নিউ ইয়র্ক)। বিশেষ অতিথি ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। এরপর শুরু হয় ফ্যাশন শো-‘বসনে ভূষণে রবির চয়নে’।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার অনুষ্ঠিত হয় প্রীতি বিতর্ক: আমিই রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ চরিত্র। সঞ্চালনায় হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সন্ধ্যা ৭ টায় স্মারক বক্তৃতা দেন চন্দ্রীল ভট্টাচার্য। এরপর অনুষ্ঠিত হয় গীতিনাট্য চিত্রাঙ্গদা। পরিবেশনায় ছিলেন অহনা ডায়েস ও তার দল। রাত ৮টায় আলোয় ভুবন ভরা: আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রনাথ।
রাত সাড়ে ৮টায় ছিলো সমাপনী অনুষ্ঠান: শতকন্ঠে রবীন্দ্রনাথ। বিশেষ উপস্থিতি ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। পরিচালনায় মহিতোষ তালুকদার তাপস। সমাপনী বিশেষ নৃত্য পরিবেশন করা হয় ‘আনন্দ ধারা বহিছে ভূবনে’ পরিচালনায় ছিলেন চন্দ্রা ব্যানার্জি। পরিবেশনায় নৃত্যাঞ্জলী। ৯টায় আজীবন সম্মাননা: অমিয় বন্ধ্যোপাধ্যায় (ভারত) ও সেলিমা আশরাফ (বাংলাদেশ)। রাত সাড়ে ৯টায় সমাপনী সংগীত সন্ধ্যায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।

রবীন্দ্র আয়োজনের আহবায়ক হাসানুজ্জামান সাকী ও মিডিয়া সমন্বয়ক হিসেবে পিনাকী তালুকদার জানান, একদল তরূণ সমন্বয়কারীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো এ উৎসবে যারা নেপথ্যে কাজ করেছেন তারা হলেন গোপাল স্যানাল, স্বীকৃতি বড়ুয়া, আব্দুল হামিদ ও সুখেন গোমেজ। অনুষ্ঠান সহযোগিতায়, ড. সাহানা ভট্টাচার্য, শুভ রায়, কৃষ ঘোষ বাপ্পা, ও শুভদ্বীপ ঘোষ। শিল্প নির্দেশনায় জাহেদ শরীফ।
রবীন্দ্র উৎসবের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ড. পবিত্র সরকার, প্রবীর রায়, মিলন আওন, মনজুর আহমেদ, হাসান ফেরদৌস, কৌশিক আহমেদ, রনদেব সরকার, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, এন্যী ফেরদৌস, নুরুল আমিন বাবু, নজরুল মিন্টু ও তানিয়া আমির

সূত্র: বাংলাপ্রেস
আইএ/ ০৯ মে ২০২৩

Scroll to Top