নারী কৃষকের ক্ষমতায়নে ব্র্যাককে সহায়তা দিচ্ছে রকফেলার ফাউন্ডেশন | চ্যানেল আই অনলাইন

নারী কৃষকের ক্ষমতায়নে ব্র্যাককে সহায়তা দিচ্ছে রকফেলার ফাউন্ডেশন | চ্যানেল আই অনলাইন

বাংলাদেশ, লাইবেরিয়া, তানজানিয়া ও উগান্ডার ৩০ লাখ প্রান্তিক নারী কৃষকের ক্ষমতায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাককে ৩ লাখ মার্কিন ডলার বা ৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা (বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ১ ডলারের ক্রয়মূল্য ১২২ দশমিক ৭ টাকা হিসাবে ) সহায়তা দিচ্ছে দ্য রকফেলার ফাউন্ডেশন।

এই সহায়তার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ব্র্যাক একটি কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে, যার লক্ষ্য হবে নারী কৃষক ও তাদের পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে বের করে আনা। এর মাধ্যমে ব্র্যাক ২০৩০ সালের মধ্যে এসব দেশকে প্রান্তিক পর্যায়ের নারী কৃষক এবং তাদের পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে বের করে আনার লক্ষ্যে কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমবর্ধমান বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য ফলপ্রসূ কার্যক্রম নিশ্চিত করতে ব্র্যাককে ৩ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রকফেলার ফাউন্ডেশন। এই অর্থ ব্যবহার করে ব্র্যাক একটি নতুন উদ্যোগের পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন করবে। যার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ, লাইবেরিয়া, তানজানিয়া ও উগান্ডার ৩০ লাখ প্রান্তিক নারী কৃষক ও তাদের পরিবারকে স্থায়ীভাবে স্বনির্ভর করে তোলা হবে।

দ্য রকফেলার ফাউন্ডেশনের এশিয়া অঞ্চলের প্রধান দীপলি খান্না বলেন, প্রান্তিক কৃষককে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ সরাসরি মোকাবিলা করতে হয়। ব্র্যাককে সহায়তার মাধ্যমে আমরা ক্ষুদ্র কৃষকদের এমনভাবে সক্ষম করে তুলতে চাই, যাতে তারা কেবল বিপর্যয় মোকাবিলা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরির ভিত্তি গড়ে তুলতেও সক্ষম হয়।

প্রথম ধাপে পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় ও খরাপ্রবণ এলাকায় চালু করা এই উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষকদের একটি সমন্বিত সেবা প্যাকেজের আওতায় আনা হবে। এর মধ্যে থাকবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার, আবহাওয়ার খবর ও জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য, অভিযোজনমূলক বিমার মতো আর্থিক সেবা এবং বাজারের সঙ্গে শক্তিশালী সংযোগ। বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী ধাপে আফ্রিকার দেশগুলোতেও মডেলটি বিস্তার করা হবে—যেখানে ব্র্যাক ইতিমধ্যে কাজ করছে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, মানুষ ও জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় দক্ষতায় সক্ষম করে তুলতে পারলে তারা নিজেরাই টিকে থাকার পথ তৈরি করে নিতে পারে। দ্য রকফেলার ফাউন্ডেশনের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করেছে, স্থানীয়ভাবে পরিচালিত উদ্ভাবন যদি বৃহৎ পরিসরে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে তা কোটি মানুষের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।

এই উদ্যোগ তৃণমূল থেকে উঠে আসা স্থানীয় জনগোষ্ঠী পরিচালিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে গড়ে উঠেছে, যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশিদারত্ব, সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততা এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ক্রমাগত অবক্ষয় যখন গ্রামীণ জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলছে, তখন তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে ব্র্যাকের এই উদ্যোগটি হতে পারে একটি সময়োপযোগী ও সমন্বিত সমাধান।

এই সহায়তা জনগোষ্ঠী পরিচালিত বৃহৎ আকারে বাস্তবায়নযোগ্য উদ্ভাবনে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির জন্য দ্য রকফেলার ফাউন্ডেশনের বৃহত্তর লক্ষ্যকেই তুলে ধরছে। ব্র্যাক এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে কাজ করছে, যা প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জীবনে অর্থবহ পরিবর্তন বয়ে আনবে।

ব্র্যাক ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। বৈষম্য ও দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা ১৪৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের সঙ্গে কাজ করে তাদের উজ্জীবিত করে নিজেদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি করেছে ব্র্যাক। কমিউনিটি নির্ভর সমন্বিত কার্যক্রম এবং বৃহৎ পরিসরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সৃষ্টির জন্য ব্র্যাক বিশ্বজুড়ে পরিচিত।

দ্য রকফেলার ফাউন্ডেশন একটি অগ্রণী দাতব্য সংস্থা যা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে জনসাধারণ, তাদের পরিবারের এবং কমিউনিটির সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। সংস্থাটি মানব কল্যাণে অনেক বড় আকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে সংস্থাটি খাদ্য, স্বাস্থ্য, জ্বালানি ও অর্থায়নে রূপান্তরের মাধ্যমে মানবিক সম্ভাবনা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় কাজ করছে।

Scroll to Top