নববর্ষ ১৪৩২: পরিবর্তন ও নতুনত্বের আবহ | চ্যানেল আই অনলাইন

নববর্ষ ১৪৩২: পরিবর্তন ও নতুনত্বের আবহ | চ্যানেল আই অনলাইন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, বাঙালির সর্বজনীন লোকউৎসব নববর্ষের আয়োজনেও পড়েছে সেই প্রভাব। এবার উৎসবটির প্রতিপাদ্যও নির্ধারণ করা হয়েছে সেই আবহ ধারণ করে- ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। উষ্ণতা আর ঝড়ো বাতাসে নতুন দিনের ডাক দিয়েছে নববর্ষ। বাঙালি আজ মেতেছে সেই উৎসবের রঙে।

বাংলা ১৪৩২ সনের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। দিনটি বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আনন্দঘন পরিবেশে নতুন বছরকে বরণ করতে নানা বয়সী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান নিয়েছে নানা প্রস্তুতি। দিনটি উদযাপনে সরকার ছুটি ঘোষণা করেছে।

দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দিনটি উদযাপনের নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবার প্রথমবারে মতো দেশের মাদরাসাগুলোতেও দিবসটি উদযাপনের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এতদিন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে আয়োজিত অনুষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।

এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। গত ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে এটি চূড়ান্ত করা হয়।

শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, আপনারা জানেন, ১৯৮৯ সালে আমরা এই বর্ষবরণ প্রথা শুরু করেছিলাম ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে। পরে তা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম নেয়। এবার আমরা মূল নামকে পুনরুদ্ধার করেছি।

আজ সকাল ৯টায় আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে। এটি চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, রাজু ভাস্কর্য, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর ও বাংলা একাডেমি ঘুরে আবার চারুকলায় এসে শেষ হবে। শোভাযাত্রাকালে বাংলামোটর, বারডেম, পলাশী ও মৎস ভবন থেকে শাহবাগের দিকে আসার রাস্তা বন্ধ থাকবে। সাধারণ মানুষের জন্য প্রবেশ উন্মুক্ত থাকবে নীলক্ষেত ও পলাশীর দিক থেকে।

র‍্যালির সময় রমনা উদ্যানের তিনটি গেট- ছবির হাট, রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেট ও কালীমন্দির গেট বন্ধ থাকবে। শোভাযাত্রার সামনে থাকবে ২০টি সজ্জিত ঘোড়া এবং পেছনে থাকবে রিকশার বহর। সাধারণ মানুষ পেছনের দিক থেকে শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন।

নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত শাহবাগ ও টিএসসি মেট্রোরেল স্টেশন বন্ধ থাকবে। এ সময় এই স্টেশনগুলোতে যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধ থাকবে এবং শোভাযাত্রা শেষে স্টেশনগুলো চালু হবে। ক্যাম্পাসে অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশ নিতে পলাশী ও নীলক্ষেত সড়ক দিয়ে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ আইডি কার্ড ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

এবারের শোভাযাত্রায় অংশ নিচ্ছে ২৮টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোর ব্যান্ড, পার্বত্য চট্টগ্রামের শিল্পীগোষ্ঠী, বামবা ব্যান্ড শিল্পীগোষ্ঠী, বাউল-সাধুশিল্পী দল, কৃষকদল, মূলধারার শিল্পীগোষ্ঠী, সাধনা নৃত্যসংগঠন, রংধনু পোশাকশ্রমিক শিল্পী দল, নারী ফুটবল দল, অ্যাক্রোব্যাটিক শিল্পীগোষ্ঠী, রিকশার বহর এবং ঘোড়ার গাড়ির বহর।

এবার বড় মোটিফ আছে ৭টি- ফ্যাসিবাদের মুখ, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, তরমুজের ফালি (যা ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের প্রতি সহমর্মিতার প্রতীক এবং তাদের পতাকার মোটিফ), শান্তির পায়রা, পালকি, ও ‘মুগ্ধ’ পানির বোতল। মাঝারি মোটিফগুলোতে থাকবে ১০টি সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, ২০টি রঙিন চরকি, ৮টি তালপাতার সেপাই, ৫টি পাখি, ৪টি পাখা, ২০টি ঘোড়া এবং ১০০টি লোকজ চিত্রাবলি। আর ছোট মোটিফগুলোর মধ্যে থাকবে ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখ, ২০০টি বাঘের মুখ, ১০টি পলো, ৬টি মাছ ধরার চাই, ২০টি মাথাল, ৫টি লাঙল ও ৫টি মাছের ডোলা।

Scroll to Top