ধানমণ্ডি ৩২ থেকে রিকশাচালককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতি | চ্যানেল আই অনলাইন

ধানমণ্ডি ৩২ থেকে রিকশাচালককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতি | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ থেকে আটক রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমানকে কীসের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন হিসেবে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

রোববার অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।

বিবৃতির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দায়ের করা মামলায় আজিজুর রহমানের সম্পৃক্ততা তদন্ত করার ক্ষেত্রে সম্প্রতি সংশোধিত সিআরপিসির ১৭৩ (এ) ধারা মোতাবেক অতিসত্বর প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে রিকশাচালক আজিজুর রহমানের জামিন দিয়েছেন আদালত। রোববার দুপুরে শুনানি শেষে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত তাকে জামিন দেন। এদিন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।

এর আগে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম শাহাদাতবার্ষিকীতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে তার বাড়ির সামনে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধর ও হেনস্তার শিকার হন রিকশাচালক আজিজুর রহমান। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত জেনিফার জেরিনের আদালতে তোলা হলে জুলাই আন্দোলনের হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিন তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান কারাগারে রাখার আবেদন করেন। পরে  বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টায় তিনি রিকশা চালিয়ে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে যান। রিকশাটি রাস্তার পাশে পার্কিং করে ফুল নিয়ে ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়ান। ফুলের তোড়ার ওপর কাগজে লেখা ছিল– ‘১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস’। হাতে ফুল দেখে গণমাধ্যমকর্মী এবং ইউটিউবাররা তাকে ঘিরে ধরে ফুল নিয়ে আসার কারণ এবং তার রাজনৈতিক পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় কয়েকজন তাকে মারধর শুরু করেন।

নিজেকে রিকশাচালক পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, তার বাসা বাসাবো এলাকায়। গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায়। তিন বছর ধরে তিনি ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে শাহবাগ থেকে চারশ টাকায় ফুলের তোড়া কিনে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। কথা বলার মধ্যেই ৫-৬ জন যুবক তাকে পান্থপথের দিকে মারতে মারতে নিয়ে যান। অবশ্য কয়েকজন ঠেকানোর চেষ্টা করেন। পরে তাকে আবার ৩২-এ এনে মারধর করা হয়।

ধানমণ্ডি থানার ওসি কাশৈন্যু মারমা বলেন, সন্দেহজনকভাবে সাতজনকে আটক করা হয়েছিল। যাচাই বাছাই করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা না থাকায় ৫ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২ জন হেফাজতে রয়েছে।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আটক রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমানকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়নি বলে জানিয়েছে। আজ রোববার ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস কর্মকর্তা মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ডিএমপির মিডিয়া সেলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর এলাকা থেকে মো. আজিজুর রহমান (২৭) নামের এক রিকশাচালককে ১৫ আগস্ট আটক করা হয়। পরদিন সন্দেহজনক একটি মামলার আসামি হিসেবে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে মো. আজিজুর রহমানের গ্রেপ্তার ও মামলা নিয়ে অহেতুক ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আটক মো. আজিজুর রহমানকে যে মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে, তা পেনাল কোডের একটি নিয়মিত মামলা। কিন্তু অনেকেই বিষয়টিকে হত্যা মামলা হিসেবে প্রচার করছেন, যা পুরোপুরি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক।

আজিজুরকে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা ঝড় ওঠে। কারাগারে পাঠানোর একদিন পরই সমালোচনার মুখে জামিন পেলেন আজিজুর।

এদিন সকালেই ১০ মাসের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে আদালতে আসেন আজিজুর স্ত্রী চুমকি খাতুন। শুনানিকালে আদালতে বসে ছিলেন তিনি।

চুমকি বলেন, ‘আমার স্বামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। আবেগের বশে সেখানে গিয়েছিলেন। জামিন পেয়েছেন, আমি খুশি।’

আজিজুরের পক্ষে ফারজানা ইয়াসমিন রাখী জামিন শুনানি করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, ‘আসামি একজন রিকশাচালক। ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধরের শিকার হন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পূর্বের একটা পেন্ডিং মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজিজুর দিন আনে, দিন খায়। তার রিকশাটাও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।’

শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম. এ আজহারুল ইসলামের আদালত আসামির এক হাজার টাকার মুচলেকায় জামিনের আদেশ দেন।

জুলাই আন্দোলনের হত্যাচেষ্টা মামলায় শনিবার (১৬ আগস্ট) তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আরেকটি আদালত। এ দিন তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমণ্ডি থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান কারাগারে রাখার আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, মামলার ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী এবং বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন আসামি মো. আজিজুর রহমানের (২৭) জড়িত থাকার বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এই আসামি ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে সাধারণ জনগণের মাধ্যমে গ্রেপ্তার হওয়ার সময় ধস্তাধস্তিতে সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হন। মামলা তদন্তের স্বার্থে আসামিকে জেলহাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।

সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

রোববার আসামিপক্ষে আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। জামিন শুনানির জন্য আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

এর আগে, গত ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ফুল দিতে গিয়ে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেওয়া হয় রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডি থানা এলাকার নিউমার্কেট থেকে সায়েন্সল্যাব এলাকায় মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন ভুক্তভোগী মো. আরিফুল ইসলাম। ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটায় আসামিরা গুলি, পেট্রোল বোমা ও হাতবোমা নিক্ষেপ করে। গুলি ভুক্তভোগীর পিঠ দিয়ে ঢুকে গেলে তাৎক্ষণিক পড়ে যান। পরে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ২ মাস চিকিৎসা শেষ সুস্থ হন।

ওই ঘটনায় চলতি বছরের ২ এপ্রিল রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ভুক্তভোগী আরিফুল।

Scroll to Top