দিনশেষে মানুষ বুঝে যায় কোনটা আসল কোনটা ফেক: রুনা খান | চ্যানেল আই অনলাইন

দিনশেষে মানুষ বুঝে যায় কোনটা আসল কোনটা ফেক: রুনা খান | চ্যানেল আই অনলাইন

ছিটকিনি, হালদা, গহীন বালুচর-এর মতো সিনেমা কিংবা কষ্টনীড়, অসময়-এর মতো ওটিটির কাজ দিয়ে সব শ্রেণির দর্শকের কাছে পেয়েছেন ‘প্রিয় অভিনেত্রী’র খেতাব! এবার নতুন সিনেমা নিয়ে আসছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত রুনা খান। তার অভিনীত নতুন সিনেমা ‘নীলপদ্ম’। দেশের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসবের ২৩তম আসরে ‘বাংলাদেশ প্যানারোমা’ বিভাগে এটি নির্বাচিত হয়েছে। এ সিনেমায় রুনা খান একজন যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চ্যানেল আই অনলাইনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ভার্সেটাইল এ অভিনেত্রী আলাপ করেছেন ‘নীলপদ্ম’ ও তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে-

দিনে দিনে আপনার কাজ নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশা বাড়ছে। বছরের শুরুতে নতুন সিনেমা ‘নীলপদ্ম’ নিয়ে আসছেন। এবারের ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সিনেমাটি প্রদর্শিত হবে। আপনি কতটা উচ্ছ্বসিত এবং দর্শক কী পেতে যাচ্ছে?
রুনা খান: বছরের শুরুতে দর্শকরা আমার এই কাজটি দেখতে পাবেন, এ কারণে নতুন বছর আমার কাছে বিশেষ আনন্দের। পৃথিবীর অনেক দেশের সিনেমার সঙ্গে আমার অভিনীত এ কাজটিও জাতীয় জাদুঘরে ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় প্রদর্শিত হবে। আমি মনে করি, একজন অভিনেত্রী হিসেবে বছর শুরু করার জন্য এর চেয়ে ভালো আর হতে পারে না।

ছবিতে দৌলতদিয়ার একজন যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুনেছি, শুটিং হয়েছে একদম ‘র’ লোকেশনে, এই চরিত্রে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?

রুনা খান: আমার সিনেমার পরিচালক তৌফিক এলাহির প্রথম সিনেমা ‘নীলপদ্ম’। তিনি পিএইচডি করেছেন, বর্তমানে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক। এই কাজটি নিয়ে দীর্ঘসময় তিনি যৌনকর্মীদের জীবন, সামাজিক অবস্থান নিয়ে গবেষণা করেছেন। এ কাজের সুবাদে দৌলতদিয়ায় গিয়ে প্রথম শুটিং করেছি। পরিচালকের ব্রিফিং রপ্ত করে সেখানে গিয়েছিলাম। যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তাদের খুব বেশি অনুকরণ করতে হয়নি। কারণ, আমার গায়ের রঙ খুবই সাধারণ, আর চারটে মানুষের মতো। তাই গায়ের রঙ নিয়ে বাড়তি যত্ন করতে হয়নি। সেখানকার মেয়েরা খুব বেশি মেকআপ নেয় না। তবে কস্টিউমের সেক্ষেত্রে ওদের হেল্প নিতে হয়েছে। কারণ, আমি সাদামাটা পোশাক নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওদের পোশাক খুবই কালারফুল। ওই পাড়ার মেয়েদের শাড়ি পরিষ্কার করে পরে ব্যবহার করেছি। প্রথম ওখানে গিয়ে মানুষ হিসেবে ওদের কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। শুটিংয়ের অবসরে ওদের সঙ্গে গল্প করেছি। ওরা খুব সাদামাটা জীবনযাপন করে। ওরা আমার সিসিনপুর, ফ্যামিলি ক্রাইসিস নাটকের গল্প বলেছে। এমনও দেখেছি সেখানে তারা ইউটিউবে শাকিব খানের সিনেমা দেখছে। কাবিলা পলাশ ওদের কাছে খুব পরিচিত। আমি একজন অভিনয় শিল্পী এটা আমার পেশা। ওরা যৌনকর্মী, এটা ওদের পেশা। আসলে সবকিছুর উপরে সবাই মানুষ।

নিশ্চয়ই তাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। যদি কখনও সুযোগ আসে দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীর জন্য আপনি কী করবেন?
রুনা খান: মানুষ হিসেবে ওদের সম্মান দেয়ার ব্যবস্থা করবো। ওরা আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল। উদাহরণ হিসেবে বলি, অনেক অভিনয়শিল্পী ১০ বছর পর পেশা বদলে ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছেন। ঠিক তেমনি তারা যৌনকর্মী যদি ১০ বছর পর সিদ্ধান্ত নেয় অন্য পেশায় যাবে, তাদের সুযোগ দেয়া উচিত। এই সুযোগটুকু যদি রাষ্ট্র বা আমাদের সমাজ দেয়ার চেষ্টা করে তাহলেই হবে।

GOVT

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সুচিত্রা সেন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নীলপদ্ম’ প্রদর্শিত হয়েছিল। সেখান থেকে এ সিনেমা নিয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?
রুনা খান:  অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমি এমন কাজ করতে পছন্দ করি যেখানে আমাদের দেশের মানুষের জীবনবোধ দেখতে পাওয়া যায়। তবে দর্শক হিসেবে আমি সব ধরনের সিনেমা ভীষণ উপভোগ করি। ‘নীলপদ্ম’র পরিচালক চেয়েছেন একটি সরল গল্প বলতে। যেখানে একটি সম্প্রদায়ের গল্প একটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে বিশেষভাবে প্রবাহিত হবে। এখানে জোর করে বার্তা দেয়া হয়নি। সিনেমা দেখার সময় দর্শক যদি কোনো বার্তা অনুভব করেন সেই বার্তা গ্রহণ করার দায়িত্ব দর্শকদের। কিন্তু এখানে এক্সট্রা মোটিভেশন আরোপ করা হয়নি। এদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যারা সিনেমাটি দেখেছেন, তারা জানিয়েছেন সরল ও জীবনবোধের গল্প তাদের কাছে ভালো লেগেছে।

এখন তো লার্জার দ্যান লাইফ সিনেমা হচ্ছে, যেটাকে মশলাদার বাণিজ্যিক সিনেমা বলা হয়। আপনার কি এমন সিনেমা করতে ইচ্ছে হয় না?
রুনা খান: আমার কাছে সব সিনেমাই বাণিজ্যিক। প্রযোজক লস করবেন এমন সিনেমার পক্ষে আমি নই। সিনেমায় বিভিন্ন জনরা থাকে। যেমন অ্যাকশন, কমেডি, হরর, রোম্যান্টিক এসব। আমি লার্জার দ্যান লাইফ সিনেমা ভীষণ উপভোগ করি। সর্বশেষ শাকিব খানের ‘তুফান’ দেখেছি সিনেমা হলে। দারুণ লেগেছে। মনে হয়েছে, ‘তুফান’ চরিত্রটি শাকিব খান ছাড়া আমাদের দেশে কেউ করতে পারতো না। সত্যি বলতে, এই ধরনের সিনেমা করার প্রস্তাব আমার কাছে আসেনি। যদি আসে, পছন্দ হলে অবশ্যই করবো। কারণ, আমি একজন অভিনয় কর্মী। আমি নিজেও অপেক্ষায় আছি সবরকম কাজে নিজেকে মেলে ধরবো। কেউ যদি মনে করে রুনা খান এমন কাজ করবে না এই ভাবনাটা তার। এই দায় আমার না। আমার অভিনয় জীবন শুরু সিসিনপুর দিয়ে। ২০০৫ সালে এফডিসিতে যখন শুটিং করতাম তখন এফডিসি ঘরানার কিছু ডিরেক্টর আমাকে ছবি করতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি তখন একেবারে নতুন ছিলাম। তাই নিজের উপর বিশ্বাস ছিল না। এই সময়ে আমি মনে করি, যে কোনো সিনেমা গল্প, চরিত্র পছন্দ হলে যে কোনো নির্মাতা বা সহশিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে আমার সমস্যা নেই।

একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মানুষের আগ্রহ এখন অনেক বেশি এটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন? আপনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে অনেকসময় গুজবের ছড়াছড়ি দেখা যায়। আবার অনেকে বলে, রুনা খান এখন ভাইরাল আর্টিস্ট! এ নিয়ে কী বলবেন?
রুনা খান: পৃথিবীর সব তারকাদের ব্যক্তিগত জীবনের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ থাকে। আমার নিজেরও আগ্রহ ঘুম থেকে উঠে জনি ডেপ কী করেন জানতে। কিন্তু চাইলেই তো তিনি জানান না! ভাইরাল আর্টিস্ট নামটা হচ্ছে সময়ের সঙ্গে টার্ন। যোগাযোগের মাধ্যমের পরিবর্তনের মতো শিল্পীদের জনপ্রিয়তার টার্ন গেছে ভাইরালে। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে আগে ভিউ কার্ড টার্ন চলে এসেছে ভাইরালে। শুধু আমি একা নই, আমার মতো অনেকে আর্টিস্ট এমন অবস্থায় রয়েছেন। আবোলতাবোল ক্যাপশনে আমাকে জড়িয়ে বিভিন্ন ভিডিও চোখে পড়ে। দিনশেষে আমিও মানুষ। আমারও কষ্ট, যন্ত্রণা থেকে প্রতিটি অনুভূতি রয়েছে। কিন্তু তারপরেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে আগাতে বিশ্বাসী। আমি বিশ্বাস করি, দিনশেষে মানুষ বুঝে যায় কোনটা আসল কোনটা ফেক।



ছবি: রুনা খানের ফেসবুক থেকে নেয়া

Shoroter Joba

Scroll to Top