তুরস্কের ‘নোপাক শিপিং’ নামের প্রতিষ্ঠানের কাছে আগামী মাসে ‘ওয়েস ওইয়ার’ নামের জাহাজটি রপ্তানি করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড়’ জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ড । ইতিমধ্যে রপ্তানির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেলে দেশে একশটি জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা সম্ভব। যা দেশের এক লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও দশ লাখ মানুষের পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
‘ওয়েজ ওয়ার’ এর দৈর্ঘ্য ৩৪১ ফুট, প্রস্থ ৫০ ফুট ও গভীরতা ২৫ ফুট। এ জাহাজটি আয়তনে মাঝারী আকৃতির। তবুও জাহাজটি ঘিরে নতুন স্বপ্নের জাল বুনছেন নির্মাতারা। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ৫ হাজার ৫০০ টন বহন ক্ষমতা সম্পন্ন মাল্টি-পারপাস কার্গো জাহাজটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট বন্দরে নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির কারিগরি পরিচালক ড. নাজমা নওরোজ জানান, ইতিমধ্যে জাহাজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সকল মেশিনারি টেস্ট ট্রায়াল পর্যায়ে কাজ চলমান রয়েছে। জাহাজটি তুরস্কের কোম্পানিটির কাছে হস্তান্তরের আগে সি ট্রায়ালের কার্যক্রম বাকি আছে। সি ট্রায়াল শেষ করে এই জাহাজটিকে ক্রেতার নিকট বুঝিয়ে দিতে ও রপ্তানী সম্পন্ন করতে আগামী জুন মাস লেগে যেতে পারে।
দেশে জাহাজ তৈরি শিল্প স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরে তা রপ্তানি করে বছরে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের পথ তৈরি সম্ভব। এছাড়াও, গভীর সমুদ্রে রাসায়নিক কারখানা স্থাপন করে জলজ উদ্ভিদ ও সামুদ্রিক শৈবাল থেকে ঔষধ কারখানার জন্য কাঁচামাল সরবরাহ সম্ভব। ফলে, দেশের ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমবে ও বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পখাতকে ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দেওয়ার দাবি জানিয়ে ‘ওয়েস ওইয়ার’ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহেল বারী বলেন: জাহাজ নির্মাণ শিল্পখাতকে বিভিন্ন সুবিদাধি দেওয়া শুধুমাত্র সময়ের দাবি নয় বরং একাধিক রপ্তানী খাতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্প ব্লু-ইকোনমির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং এর উন্নয়ন ছাড়া ব্লু-ইকোনমি সঠিকভাবে বিকশিত হওয়া সম্ভব নয়। পার্শবর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের জাহাজ নির্মাণ খরচ প্রায় ১৫ শতাংশ কম। কিন্তু জাহজ নির্মাণ শিল্প একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। একটি জাহাজ তৈরিতে সময় লাগে দুই থেকে তিন বছর। ফলে এলসি ফাইন্যান্সিং সংক্রান্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়নের জন্য এ ধরনের সমস্যা আমাদের প্রথমেই নিরসন করা উচিত।
বর্তমানে জাহাজ নির্মাণ শিল্প থেকে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা আয় করে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের জাহাজ রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২৬ সালে দাঁড়াবে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারে। যদি প্রতিবন্ধকতা দূর করে সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায় তাহলে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে ২০৪০ সালে এই শিল্প থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ খাতকে সম্ভাবনাময় মনে করে ২০০৮ সালে ডেনমার্কে অত্যাধুনিক কন্টেইনার জাহাজ ‘স্টেলা মেরিস’ রপ্তানি করে আনন্দ শিপইয়ার্ড। তাদের এই রপ্তানির কারণে বাংলাদেশ জাহাজ রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে পরিচিতি পায়। গত দেড় দশকে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের ৩৫৬টিরও বেশি জাহাজ তৈরি করেছে।
এর মধ্যে আছে কার্গো জাহাজ, যাত্রীবাহী জাহাজ, মাল্টিপারপাস আইস-ক্লাস ভেসেল, ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট, অফশোর প্যাট্রল ভেসেল, টাগবোট, মাছ ধরার জাহাজ, বাল্ক ক্যারিয়ার ও কনটেইনার ক্যারিয়ার।
ইতিমধ্যে দেশে থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ডেনমার্ক, জার্মান, নরওয়ে, মোজাম্বিক ও ইউকেসহ বিভিন্ন দেশে ৫০টি জাহাজ রপ্তানি করেছে।