ইউরোপের একাধিক দেশে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। অঞ্চলটির একাধিক দেশে ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ফ্রান্সের ৯৬টি মূল ভূখণ্ডের মধ্যে ৮৪টিতে কমলা সতর্কতা (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যায়) জারি করা হয়েছে। দেশটির পরিবেশমন্ত্রী অ্যাগনেস প্যানিয়ার রুনাচে এই পরিস্থিতিকে “অভূতপূর্ব” বলে বর্ণনা করেছেন।
ইতোমধ্যে ফ্রান্সের প্রায় ২০০টি স্কুল বন্ধ অথবা আংশিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন জানিয়েছেন, আঞ্চলিক প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের বাড়িতে রাখার সুযোগ দেওয়া এবং স্কুলছাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে কাজ চলছে।
দক্ষিণ ফ্রান্সের কর্বিয়েরেস অঞ্চলে রোববার বেশ কয়েকটি বনে আগুন লেগেছিল। এতে একটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। সোমবার দমকল বাহিনী জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
ফ্রান্সের পাশাপাশি স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ক্রোয়েশিয়াসহ বলকান অঞ্চলের একাধিক দেশে তাপ সতর্কতা জারি রয়েছে।
স্পেন এবং পর্তুগাল দুদেশেই জুনের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন রেকর্ড হয়েছে। শনিবার আন্দালুসিয়ার এল গ্রানাডোতে তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। রোববার মধ্য পর্তুগালের মোরা শহরে তাপমাত্রা ছিল ৪৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
লিসবনসহ পর্তুগালের সাতটি জেলা সর্বোচ্চ সতর্কতার আওতায় রয়েছে। স্পেনেরও বড় অংশে তাপ সতর্কতা বজায় আছে। ২১ বছর বয়সী আনাবেল সানচেজ সেভিল বলেন, আমি ভালো করে ঘুমাতে পারছি না। হিট স্ট্রোকে ভুগি, খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, মনোযোগ রাখতে পারি না।
ইতালিতেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। রোম, মিলান, ভেনিসসহ অন্তত ২১টি শহরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি হয়েছে। সার্ডিনিয়াতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইতালীয় সোসাইটি অফ ইমার্জেন্সি মেডিসিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারিও গুয়ারিনো জানিয়েছেন, জরুরি বিভাগগুলোতে হিটস্ট্রোকের ঘটনা প্রায় ১০% বেড়েছে।
যুক্তরাজ্যের কিছু অংশে সোমবার জুন মাসের অন্যতম উষ্ণতম দিন রেকর্ড করা হতে পারে, যেখানে তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। এদিকে জার্মান আবহাওয়া পরিষেবা জানিয়েছে, মঙ্গলবার এবং বুধবার তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
যুক্তরাজ্যের কিছু অংশে সোমবার জুনের সবচেয়ে উষ্ণতম দিনগুলোর মধ্যে একটি দেখা যেতে পারে। দেশটির কিছু অংশে তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হতে পারে।
বলকান অঞ্চলেও তাপদাহের প্রভাব স্পষ্ট। সার্বিয়া বুধবারকে রেকর্ড শুরুর পর সবচেয়ে উষ্ণতম দিন হিসেবে ঘোষণা করেছে। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার রাজধানী সারায়েভোতে বৃহস্পতিবার ৩৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। উত্তর মেসিডোনিয়ার রাজধানী স্কোপজেতে শুক্রবার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।
দাবদাহের কারণে একাধিক দেশে বনাঞ্চলে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। তুরস্কের ইজমিরের কাছে সেফেরিহিসার জেলায় আগুনে অন্তত ২০টি বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্রোয়েশিয়াতেও উপকূলীয় এলাকায় তাপ সতর্কতা এবং দাবানলের খবর এসেছে। গ্রিসে এক সপ্তাহ ধরে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা বজায় রয়েছে এবং রাজধানী এথেন্সের কাছে উপকূলীয় শহরগুলোতে আগুনে ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে।
এ তাপপ্রবাহ শুধু জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি নয়, জলবায়ুর ওপরও বড় প্রভাব ফেলছে। অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের উষ্ণ পানি আক্রমণাত্মক প্রজাতি যেমন বিষাক্ত লায়নফিশের বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে। আল্পসের হিমবাহগুলোও দ্রুত গতিতে গলে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও আলাদা কোনো চরম আবহাওয়া সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী করা কঠিন, তবুও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বলছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন এবং তীব্র হয়ে উঠছে।