বরিশালের বাবুগঞ্জে মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন সিঙ্গাপুর ফেরত যুবক তারিকুল ইসলাম মাসুম। চলতি মৌসুমে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নে তারিকুলের মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ১৪ শতাংশ জমির উপর (বারি-১) মাল্টা গাছের সাথে ঝুলছে অসংখ্য ফল। পাশাপাশি ভিয়েতনামী (১২ মাস) মাল্টা, চাইনিজ কমলা ও থাই জাম্বুরাও রয়েছে। তবে তিনি অসুস্থ থাকায় সময়মতো পর্যাপ্ত পরিচর্যা করতে না পারায় গত বছরের তুলনায় এবার ফলন অনেক কম হয়েছে বলে জানান তারিকুল।
তিনি জানান, ‘২০১০ সালের শুরুতে কাজের সন্ধানে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। সেখানে দীর্ঘ ৮ বছর থেকে ২০১৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। তবে দেশে ফিরে তিনি বসে থাকেননি, ইউটিউবে মাল্টা চাষ ও ফলন সম্পর্কে ধারণা পেয়ে নিজেই উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেন মাল্টা চাষ।
তবে মাল্টা চাষ শুরুর পর সফল হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষের পরিকল্পনা করলেও উঁচু জমির অভাবে পিছিয়ে রয়েছেন এই উদ্যোক্তা। এজন্য তিনি সরকারি সহযোগিতা চাইছেন। পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আমের মতোই মাল্টা সংগ্রহের দিনক্ষণ ঘোষণা এবং অন্যান্য চাষীদের আগাম ফল সংগ্রহ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শাহ মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নীচু জমি ভরাট করার জন্য কৃষি অফিসের কোন প্রকল্প নেই। তবে মাল্টা গাছের পরিচর্যাসহ অন্যান্য বিষয়ে মাল্টা চাষীদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাবুগঞ্জসহ বরিশালের মাটি বারি-১ মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তারিকুলের দেখাদেখি এ এলাকায় অন্তত আরো ১০ থেকে ১২ জন উদ্যোক্তা স্বল্প পরিসরে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। তাছাড়া আমাদের দপ্তর থেকে সকল উদ্যোক্তাদের মাল্টা বাগানের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।’
শখের বশে করা মাল্টা বাগান থেকে গত ৩ বছর ধরে ৩০-৪০ মণ মাল্টা বিক্রি করে আসছেন। প্রতিবছর এই বাগান থেকে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা মাল্টা বিক্রি করে থাকেন। তারিকুলের মাল্টা বাগান ঘুরে দেখা গেছে তার সফলতার চিত্র। চলতি বছর তিনি কেজিপ্রতি ১০০ টাকা দরে ৭ মণেরও বেশি মাল্টা বিক্রি করেছেন। ৩২টি মাল্টা গাছ থেকে আরো ২০-২৫ মণ মাল্টা সংগ্রহ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এ ব্যাপারে তারিকুল ইসলাম বলেন, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ প্রতি বছর তার মোট ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। চলতি বছর যদি তিনি ৩০ মণ মাল্টা বিক্রি করতে পারেন তবে সব মিটিয়ে ১ লাখ টাকার বেশি লাভ করতে পারবেন। তার বাগান ও ফলন দেখে এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন।
প্রায় প্রতিদিনই বাগানটি দেখতে মানুষ আসছেন। অনেকেই বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তিনিও তাদের উৎসাহিত করছি। ভালোভাবে বাগান করতে পারলে ব্যাপক লাভবান হওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি। শখের বশে বাগান করতে গিয়ে এখন বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষের চিন্তা করছেন তারিকুল। তিনি মাল্টা বাগান সম্প্রসারণের জন্য পার্শ্ববর্তী আরো ৩৫ শতক জমি মাটি ভরাট করে মাল্টা চাষের আওতায় আনার জন্য পরিকল্পনা করলেও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তা আর করা হয়নি। তবে তিনি এখনো এ ব্যাপারে আশাবাদী। অবশ্য এক্ষেত্রে তিনি সরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন।