কয়েকটি বাম সংগঠনের এক প্রার্থীকে আদালতে মামলা করার জন্য গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও নারীদের জন্য নির্বাচন কতটা বাড়তি বিপদের কারণ হতে পারে, তা প্রকাশ করে দিয়েছে। আমরা জানি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক মা কীভাবে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। সুতরাং আগামী জাতীয় নির্বাচনেও নারীদের এই বাড়তি ঝুঁকি মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ যে ভোলা যাবে না, ডাকসুর নির্বাচন তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়ার বিপদ ডাকসুতে যতটা দেখা গেল, বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা—জাতীয় নির্বাচনে তা দেখা দেবে শত গুণ বড় আকারে। প্রশ্ন হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে নির্বাচন প্রভাবিত করতে পারে—এমন ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো বা বটবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল? অন্তত সরকার ও ডিজিটাল মাধ্যমের তদারকি প্রতিষ্ঠান বিটিআরসিকে কি এই ঝুঁকির কথা জানিয়ে সহায়তা চেয়েছিল?
এবারের ডাকসু নির্বাচনে ব্যতিক্রমী আরেকটি বিষয়ের কথা উল্লেখ না করলেই নয়, সেটি হচ্ছে লড়াইয়ের সঙ্গী কমরেডের প্রতি সম্মান দেখানোর অনন্য নজির গবেষণা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সানজিদা আহমেদ তন্বির বিরুদ্ধে কোনো সংগঠনের প্রার্থী না দেওয়া। গত বছরের ১৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন সানজিদা।
ভোটের ফল যা–ই হোক, তাঁকে স্বাগত জানিয়েও বলব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমাও একই ধরনের সম্মান পেতে পারতেন। নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াইয়ের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের গণহত্যার বিরুদ্ধে তাঁর যে নৈতিক অবস্থান, তার জন্য তাঁর এই সম্মান পাওয়া উচিত। ফিলিস্তিনি গণহত্যায় ইসরায়েলের সহযোগী হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাহসী নারীর পুরস্কার প্রত্যাখ্যান কোনো সামান্য বিষয় নয়। তাঁর এই ত্যাগ সবার জন্য শিক্ষণীয় হয়ে রইল।
● কামাল আহমেদ সাংবাদিক
* মতামত লেখকের নিজস্ব