পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়ার পর এবার ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ফতেপুর গ্রামে দেখা মিলল একটি বিরল প্রজাতির বুনো ময়ূরের। ধারণা করা হচ্ছে, ভারত সীমান্ত পেরিয়ে খাবারের সন্ধানে এপারে এসেছে পাখিটি। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ময়ূরটি উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে উপজেলা প্রশাসন।
সোমবার (১৬ জুন) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গ্রামের ধানক্ষেতে হঠাৎ এক গ্রামবাসীর চোখে পড়ে ধূসর রঙের উজ্জ্বল পালকওয়ালা একটি বড় পাখি। পরে খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের অনেকেই ময়ূরটিকে দেখতে ও ধরতে ছুটে আসে। প্রায় তিন ঘণ্টা তাড়া করার পর ময়ূরটি ফতেপুর গ্রামের ফইজুল ইসলামের খড়ের গাদার নিচে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই পরে সেটিকে ধরা হয়।
গ্রাম পুলিশ মাহাবুব আলম জানান, দুপুরে বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানান। পরে ইউএনও-কে অবহিত করে আমরা বন বিভাগকে খবর দিই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, পাখিটির নিরাপত্তা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করি। পাখিটি অসুস্থ অবস্থায় ছিল।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে প্লান্টেশন ম্যানেজার (পিএম) অনীল চন্দ্র জানান, গ্রামবাসীর তাড়ায় ভয় পেয়ে ময়ূরটি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এটি ভারতীয় প্রজাতির ময়ূর- ভারতে এই জাতের ময়ূর বেশি দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, খাবারের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে এসেছে এটি।
এই ঘটনা আগের কিছু নজিরকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। পঞ্চগড় জেলার বন বিভাগের কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ জানান, চলতি বছরের ২৫ মে পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলার দর্জি পাড়া এলাকায় এমন আরেকটি ময়ূরের দেখা মিলে। এছাড়া ২০১৬ সালে দেবীগঞ্জের মারেয়া গ্রাম এবং ২০২২ সালে বোদা উপজেলার চকলাহাট এলাকা থেকেও বুনো ময়ূর উদ্ধার করা হয়েছিল।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দিনাজপুর জেলার কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রহিম বলেন, আমি যখন তেতুঁলিয়া উপজেলায় কর্মরত ছিলাম, তখন দেখেছি- গ্রীষ্মকালে সীমান্তের ওপার থেকে দুই-চারটা ময়ূর খাবারের সন্ধানে এপারে চলে আসে। সীমান্তবর্তী এলাকায় এটা নতুন কিছু নয়।
পাখি ও বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা পরিবেশ গবেষক ড. নূরুল হাসান জানান, ময়ূর অত্যন্ত এলার্ট ও বুদ্ধিমান পাখি। তারা সচরাচর মানুষের ধারে কাছেও আসে না। তবে আবাসস্থল সংকোচন ও খাবারের সংকটের কারণে অনেক সময় তারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে লোকালয়ে চলে আসে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় উদ্যানে কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখার পর ময়ূরটির অবস্থা উন্নতি হলে তাকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হতে পারে।