সফল নারী উদ্যোক্তা ও সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক সংগীতা খান আর নেই। ক্যারিয়ারের সফলতার পাশাপাশি সুব্যবহার আর রুচিশীলতার জন্য শোবিজে আলাদা পরিচিতি ছিল এই মানুষটির। তার আরেক পরিচয়, তিনি এ দেশের ‘জিঙ্গেল কুইন’খ্যাত সুমনা হকের বড় বোন।
আজ মঙ্গলবার ভোরে অনেকটা হুট করেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু বরণ করেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে উদ্যোক্তা সমাজ এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।
সংগীতা খানের সঙ্গে দুটি আলাদা সময়ের ছবি শেয়ার করে জনপ্রিয় অভিনেত্রী রুনা খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তোমার সাথে দেখা হলো। এত ভীড়ের মধ্যেও কত গল্প, ব্যাংককের কথা, শমী আপুর কথা, অনির কথা, ওমরা করতে যাবে সে গল্প। ৩ মাসও হয়নি! ফ্লোরা-বুলা চলে যাবার পর থেকে আমার খুব মনে হতো, সবই পড়ে থাকে, হঠাৎ করে মানুষটাই শুধু থাকে না! আজ ভোরে তুমি আবার সেটাই শক্ত করে মনে করিয়ে দিলে। যতবার, যত জায়গায় দেখা হয়েছে তুমি আমার গালে-পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করে দিয়েছো। কি মায়া করে আমার হাতটা তোমার দুই হাতে ধরে গল্প করতে। আমি তোমাকে দেখতে না পেলেও, দুর থেকে তুমি আমাকে দেখে কাছে এসে জড়িয়ে ধরতে, ‘এই যে আমার মিষ্টি মেয়ে’ বলে! আমার গালে-মুখে হাত বুলানো তোমার আদর, আমার সবসময় মনে থাকবে সংগীতা আপা। আর তোমার আপুজি ডাক। আল্লাহ তোমার আত্মার শান্তি দিন।’
সংগীতা খান কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ১৯৮৯ সালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে। সেখানে চাকরি করেন ২০ বছর। চাকরি করা অবস্থায় যুক্ত হন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বনানীতে নিজের ‘ডিভাইন বিউটি লাউঞ্জ’ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
জন্ম তার ১৯৬১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে। আদি বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ। বাবা আনোয়ারুল হক। বাংলাদেশ বস্ত্রকল কর্পোরেশনের (বিটিএমসি) অর্থ পরিচালক (ফিন্যান্স ডিরেক্টর) ছিলেন তিনি। মা বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রয়াত কবি খালেদা এদিব চৌধুরী। তার বাবা ১৯৯৪ সালে এবং মা ২০০৮ সালে গত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসন বিভাগে ১৯৮৪ সালে স্নাতক ও ১৯৮৭ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন সংগীতা। তিনি নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ‘ইয়েলো ইন্সপায়ারিং ফিমেল অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারও পেয়েছেন।
সংগীতা খান বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ১৯৭৯ সালে। প্রকৌশলী এফআর খানকে বিয়ে করেন তিনি। এফআর খান দেশের আবাসন শিল্পের একজন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব। তিনি আবাসন প্রতিষ্ঠান বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস’র (বিটিআই)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাদের দুই ছেলেমেয়ে। ২০১২ সালে সংগীতা খান যুক্ত হন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (বিডাব্লিউসিসিআই) সঙ্গে। সংগঠনটির ট্রেজারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিহনি। এ ছাড়াও তিনি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (এফবিসিসিআই) সাধারণ পর্ষদ সদস্য (জেনারেল বডি মেম্বার), ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (আইবিসিসিআই) পরিচালক ও জার্মান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (জিবিসিসিআই) সদস্য।