মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ কেন্দ্রিক শুল্ক নীতির প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল। বুধবার শিকাগোতে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ‘আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিতভাবে’ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাওয়েল জানান, শুল্ক বৃদ্ধির মাত্রা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি। এটি দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতে স্থায়ী ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। এটি একেবারে মৌলিক নীতিগত পরিবর্তন। আধুনিক অর্থনৈতিক ইতিহাসে এমন উদাহরণ নেই।
ফেডরেল রিজার্ভ প্রধানের ভাষায়, এই অনিশ্চয়তা শুধু মুদ্রাস্ফীতিকে নয়, কর্মসংস্থানের দিকেও চাপ তৈরি করছে। যদিও সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, মার্কিন অর্থনীতি এখনও তুলনামূলকভাবে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তারপরও শুল্ক বৃদ্ধি অর্থনৈতিক প্রবাহকে ব্যাহত করছে।
পাওয়েল সতর্ক করেন, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের ওপর খরচের বোঝা পড়ছে। একই সঙ্গে বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে, যা উচ্চ অনিশ্চয়তার সময়ে আরও বেশি বিপজ্জনক।
শেয়ারবাজারে ধস---
ট্রাম্প প্রশাসনের চীনের ওপর নতুন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরপরই ওয়াল স্ট্রিটে বড় ধস দেখা যায়। প্রযুক্তি খাত ছিল পতনের নেতৃত্বে, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী এনভিডিয়া—যা এক পর্যায়ে ১০ শতাংশেরও বেশি দর হারায়।
এছাড়া, নাসডাক সূচক ৪ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি ৩ শতাংশ এবং ডাও জোন্স ২ শতাংশেরও বেশি পড়ে যায়। অর্থনীতিবিদদের মতে, ট্রাম্পের একের পর এক শুল্ক আরোপ এবং বাণিজ্যিক হুমকি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় তৈরি করছে।
ট্রাম্পের আত্মতুষ্টি---
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সংকটে অস্থির না হয়ে বরং সামাজিক মাধ্যমে জাপানের সাথে ‘বড় অগ্রগতি’র ঘোষণা দিয়েছেন। তার ভাষায়, একাধিক দেশের সাথে পৃথক চুক্তি করে শুল্ক চাপিয়ে দেওয়ার কৌশলই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে লাভজনক।
ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, তার নীতির মাধ্যমে বিদেশি পণ্যের প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা দূর হবে এবং বৈশ্বিক উৎপাদন ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হবে।
চীনের পাল্টা হুঁশিয়ারি---
এই পরিস্থিতিতে চীনও চুপ নেই। ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এক বিবৃতিতে বলেন, শুল্ক যুদ্ধ বা বাণিজ্য যুদ্ধে কোনও পক্ষই জয়ী হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, আমেরিকা যদি প্রকৃত অর্থে সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চায়, তাহলে তাদের হুমকি, চাপ ও ব্ল্যাকমেইলের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে এবং সমতা, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে চীনের সাথে কথা বলতে হবে।
সংকটে বৈশ্বিক বাণিজ্য---
চীন জানিয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে দেশটি ৫.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যার পেছনে অন্যতম কারণ হলো—রপ্তানিকারকরা মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই পণ্য দ্রুত রপ্তানির চেষ্টা করেছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই প্রবৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের একতরফা বাণিজ্য নীতি বৈশ্বিক বাজারে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজার, উৎপাদন এবং ভোক্তামূল্য বৃদ্ধির ওপর।