ট্রাম্পের শুল্ক আঘাতে বিপর্যস্ত ভারতের বিস্ময়-ক্ষোভ: নিউইয়র্ক টাইমস

ট্রাম্পের শুল্ক আঘাতে বিপর্যস্ত ভারতের বিস্ময়-ক্ষোভ: নিউইয়র্ক টাইমস

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতিতে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং কড়া সমালোচনা নয়াদিল্লিতে তীব্র বিস্ময় ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি দেশের ওপর শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিলেও ভারত আগেই দুঃসংবাদটি পেয়েছিল। তবে সেই বাড়তি সময়ও খুব একটা কাজে আসেনি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

তাদের ভাষায়, ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্য ছিল স্পষ্টভাবে ভারতবিরোধী ও অপমানজনক। ভারতকে ‘মৃত অর্থনীতি’ আখ্যা দিয়ে দেশটির বিদ্যমান বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাকে বলা হয়েছে ‘বিরক্তিকর ও কঠিন’। এ ছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনায় অতিরিক্ত জরিমানার হুমকিও এসেছে হোয়াইট হাউস থেকে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের অংশবিশেষ

অন্যদিকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের প্রশংসা করে দেশটিকে তেল অনুসন্ধান চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।

শেয়ারবাজারে ধস, রপ্তানি খাতে শঙ্কা
ট্রাম্পের এই শুল্কে ভারতের সবচেয়ে বড় দুটি রপ্তানি খাত- ব্যক্তিগত ইলেকট্রনিক্স (প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার) ও ওষুধ শিল্প (প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার)- মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

প্রাথমিকভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান দাবি করেছিল, এই পণ্যগুলো শুল্কের আওতার বাইরে থাকবে। তবে শুক্রবার গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ জানিয়েছে, এসব পণ্যও শুল্কের মধ্যে পড়ছে। এর জেরে ভারতের শেয়ারবাজার টানা দুই দিন ধরে নিম্নমুখী থেকেছে। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি ব্যাংকগুলোও বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে।

বাড়তি শুল্কের হুমকি
ট্রাম্প আরও ঘোষণা দিয়েছেন, ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলোকে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে। পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাশিয়া ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ না করলে মস্কোর বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর ১০০ শতাংশ ‘পরোক্ষ শুল্ক’ আরোপ করা হবে।

এতে ভারতের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিরোধী নেতা শশী থারুর বলেছেন, ‘১০০ শতাংশ জরিমানার কথাও শোনা যাচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক কার্যত ধ্বংস করে দেবে।’

রুশ তেল কেনা কমাচ্ছে ভারত
শুল্ক ঘোষণার আগেই ভারতের রিফাইনারিগুলো রুশ তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহাজ ও পণ্য পরিবহন ট্র্যাকিং প্রতিষ্ঠান কেপলারের বিশ্লেষক সুমিত রিতোলিয়া। তাঁর মতে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় ভারত এখন তেল আমদানিতে বিকল্প উৎস খুঁজছে।

ভারত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি খরচ করে তেল আমদানি করে, যার বড় অংশ আসে রাশিয়া থেকে। ট্রাম্প প্রশাসন যদি ভারতকে মার্কিন তেল ও গ্যাস কিনতে বাধ্য করে, তাহলে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর নিজের লক্ষ্য পূরণে সুবিধা পাবে।

মোদী-ট্রাম্প সম্পর্কে ফাটল
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই নীতিগত অবস্থান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তার ‘প্রকৃত বন্ধুত্বের’ সম্পর্কেও ফাটল ধরিয়েছে। চার দফা আলোচনার পর ট্রাম্প মোদীর সঙ্গে সরাসরি ফোনে চূড়ান্ত সমঝোতা করতে চাইলেও ভারত শেষ মুহূর্তের এমন চাপে রাজি হয়নি।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, ভারত আলোচনায় ‘ধীরগতির কৌশল’ নিচ্ছে। তবে ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের দ্রুত চুক্তির তাগিদ আর ভারতের আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধীরগতি- এই ব্যবধানেই মূলত দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ২০১৩ সালে ওবামা ও মনমোহন সিংয়ের সময় গড়ে ওঠা বিস্তৃত বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারত্ব রয়েছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই অংশীদারত্ব নানা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে। আমরা প্রতিশ্রুত বিষয়গুলো এগিয়ে নিতে মনোযোগী এবং সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলেই বিশ্বাস করি।’

Scroll to Top