যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী জনসংখ্যা ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্য হ্রাসের মুখোমুখি হয়েছে। জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে দেশটিতে দশ লাখেরও বেশি অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে। অভিবাসনকে জাতির জন্য হুমকি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
সোমবার ২৪ আগস্ট প্রকাশিত দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, পিউ রিসার্চ সেন্টারের নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৫৩.৩ মিলিয়ন, যা জুনের মধ্যে কমে ৫১.৯ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন বাসিন্দাদের মধ্যে অভিবাসী ১৫.৮% থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৫.৪%-এ।
জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়, জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার অভিবাসী কর্মী যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার থেকে বাদ পড়েছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমশক্তির ১৯ শতাংশই অভিবাসী।
পিউ রিসার্চ সেন্টার অভিবাসী জনসংখ্যায় এই হ্রাসের জন্য একাধিক নীতিগত পরিবর্তনকে দায়ী করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৪ সালে জো বাইডেন প্রশাসনের আশ্রয় নীতিতে আনা কঠোরতা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৮১টি নির্বাহী আদেশ, যা নতুন অভিবাসন ও অননুমোদিত অভিবাসীদের নির্বাসনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সেন্টারটি সতর্ক করেছে যে তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতির পরিবর্তন এবং অভিবাসীদের মধ্যে জরিপে অংশগ্রহণে অনীহা কিছু হ্রাসের চিত্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
কোন দেশ থেকে কত অভিবাসী?
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় অভিবাসী গোষ্ঠী ছিল মেক্সিকোর, যার সংখ্যা ছিল এক কোটির বেশি — মোট অভিবাসীদের প্রায় ২২%। তবে ২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকো থেকে অভিবাসনের হার ধারাবাহিকভাবে কমছে।
ভারত থেকে অভিবাসী দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে (৩.২ মিলিয়ন), এরপর রয়েছে চীন (৩ মিলিয়ন), ফিলিপাইন (২.১ মিলিয়ন) এবং কিউবা (১.৭ মিলিয়ন)।
‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে অভিবাসন আইনের প্রয়োগে কড়াকড়ি করছে। ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের জুনে প্রতিদিন গড়ে গ্রেপ্তারের হার ২৬৮ শতাংশ বেড়েছে। এমনকি যেসব অভিবাসীর কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই, তারাও টার্গেটে পড়ছেন।
মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (আইসিই ) ইতোমধ্যেই ৮ হাজার ১০০ জনের বেশি অভিবাসীকে এমন দেশে ফেরত পাঠিয়েছে, যেগুলো তাদের জন্মভূমিও নয়।
সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষণা করেছে, তারা ৫ কোটি ৫০ লক্ষের বেশি বিদেশি নাগরিকের ভিসা ও অভ্যন্তরীণ অবস্থান পর্যালোচনা করছে। এর মধ্যে অনেকে অস্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস বা ভ্রমণের অনুমতি পেয়েছেন, যাদের ভিসা বাতিল করে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী অবস্থান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে এবং এর প্রভাব আরও গভীর হতে পারে।