আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় বসার কয়েক সপ্তাহ পার করেছেন লিজ ট্রাজ। এরই মধ্যে পড়েছেন চরম বিপাকে। লড়ছেন গদি রক্ষার লড়াইয়ে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে সম্প্রতি লিজ ট্রাজ তার ঘনিষ্ঠ অর্থমন্ত্রী কোয়াতেংকে বরখাস্ত করেন। এর রেশ কাটতে না কাটতেই পদত্যাগ করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যান।
বিবিসি বলছে, সুয়েলা মাত্র ৪৩ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশটির স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বিকালে ব্রাভারম্যান তার পদত্যাগপত্র জমা দেন।
সুয়েলা ব্রাভারম্যানের বলেছেন, নিজের ব্যক্তিগত ইমেইল থেকে পার্লামেন্টের সহকর্মীর কাছে একটি ‘অফিসিয়াল ডকুমেন্ট’ পাঠানোয় তিনি পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রে তিনি এই ইমেইল পাঠানোকে ‘প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘনের’ অভিযোগ স্বীকার করেছেন। সেইসঙ্গে বলেছেন, আমি ভুল করেছি, আমি এর দায় স্বীকার করছি এবং পদত্যাগ করছি।
সুয়েলার পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লিজের কার্যালয় থেকে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্রাভারম্যানের উত্তরসূরি হচ্ছেন গ্রান্ট শ্যাপস। তিনি, কনজারভেটিভ দলের নেতা নির্বাচনের লড়াইয়ে ঋষি সুনাকের বড় সমর্থক ছিলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের আমলে গ্রান্ট শ্যাপস পরিবহণমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছিলেন। এরই মধ্যে গ্রান্ট ব্রিটিশ জনগণের জন্য যা নিরাপত্তা দরকার তা পূরণ করার অঙ্গীকার করেছেন।
অনলাইন বিবিসি বলছে, উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীর জন্য টালমাটাল হয়ে পড়েছে। বিরোধী দলীয় এমপিরা অভিযোগ করেছেন কনজার্ভেটিভ দলের কিছু সদস্যকে সরকারের ফ্রাকিং ভোটের সময় অবমাননা করা হয়েছে। তাদের ওপর হাত তোলা হয়েছে। এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন একজন মন্ত্রী।
কিন্তু তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কনজার্ভেটিভ দলের অনেক এমপি। তারা নিজেদের দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এ অবস্থাকে বিপর্যয়কর বলে অভিহিত করেছেন কনজার্ভেটিভ দলের এমপি চার্লস ওয়াকার। তাকে দেখে বেশ ক্ষুব্ধ মনে হয়েছে। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, সরকারের জন্য আর ফিরে আসার কোনো পরিস্থিতি নেই। পরে তিনি যোগ করেন, আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রীকে খুব শিগগিরই পদত্যাগ করা উচিত। কারণ, তিনি এই পদ ধরে রাখার যোগ্য নন।
বুধবার দিনটিকে ডাউনিং স্ট্রিট ভালভাবে শুরু করেছিল। তারা মনে করেছিল নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে জেরেমি হান্টকে নিয়োগ দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর বিপদ কেটে গেছে। ওদিকে এমপিদের সঙ্গে সাপ্তাহিক প্রশ্নোত্তর পর্বেও টিকে যান প্রধানমন্ত্রী ট্রাস। তুলনামুলকভাবে তাকে কমই খোঁচানো হয়েছে এ পর্বে। কিন্তু এর পরপরই পরিস্থিতি এলোমেলো হতে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় চলে যায় যে, দেখে মনে হয় এই বিশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এর শেষ হবে না।
বিবিসির পলিটিক্যাল এডিটর ক্রিস ম্যাসন বলছেন, বিস্ফোরণ অনিবার্য হয়ে ওঠে। সম্ভবত তা অত্যাসন্ন হয়ে ওঠে। অকার্যকর পরিস্থিতি এতটাই গভীর হয়ে ওঠে যে, মনে হয় যতদিন লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী থাকবেন ততদিন শুভবোধের উদয় হবে না। কারণ, ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভদের মধ্যে ক্ষোভ খুব গভীর হয়েছে। তাহলে প্রধানমন্ত্রী এখন কি করবেন? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ক্রিস ম্যাসন বলেন, তিনি কি করবেন তা তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে কি করবেন, সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তাকে তার দল বলতে পারে যে- খেলা শেষ। দলের ভিতরে অসন্তোষ তীব্র। অথবা লিজ ট্রাস অব্যাহতভাবে দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেন। তবে এই মুহূর্তে দ্রুততার সঙ্গে আরেকজন প্রধানমন্ত্রীর বিকল্প বের করাও কঠিন। যদি সেটাই চেষ্টা করা হয়, তাহলে সারাবিশ্বের দেশগুলোতে এক অদ্ভুত বার্তা যাবে। এ জন্য একটি সাধারণ নির্বাচনের কথা হয়তো কেউ এখন আর শুনবে না। বৃটেনে বর্তমান সরকার একেবারেই শিশু অবস্থায়। তা সত্ত্বেও তার আয়ুষ্কাল গভীরভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এতে তার সেই আয়ুষ্কাল দিনের পর দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে। এই বিশৃংখল অবস্থা আরও গভীর হতে পারে।