টাঙ্গাইলে বাস চাপায় স্বামী-স্ত্রী নিহত

টাঙ্গাইলে বাস চাপায় স্বামী-স্ত্রী নিহত

একসময়ের খরস্রোতা রহমতখালী খাল এখন কেবলই ইতিহাস। দখলে-দূষণে বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্যবাহী এ খালটি। বিগত কয়েক বছর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করে নিয়েছে খালটির দুই পাশ। জেলা শহরের বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে খালের পানি। এতে বাড়ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই, নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই পুরো খাল দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের।

এদিকে অবৈধ দখলদারদের তালিকা হচ্ছে, খুব শিগগিরই দখল উচ্ছেদ ও খননের মাধ্যমে খালটি দৃষ্টিনন্দন করে ব্যবহারের উপযোগী করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী জানান, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারি, জকসিন, মাদাম ও পৌর শহর সহ ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী রহমতখালী খাল। একসময় ভোলা-বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাণিজ্যিক পণ্যসামগ্রী নিয়ে স্টিমার ও নৌকায় আসা-যাওয়া করতেন ব্যবসায়ীরা।

এ খালের পানি দিয়েই বিভিন্ন মৌসুমে ধান ও সবজির চাষ করতেন চাষিরা। বর্তমানে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে কোনো না কোনো স্থাপনা বা বহুতল ভবন। ইট-বালি আর মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে খালের দু-পাশ। এতে দিন দিন খাল ছোট হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে, খালে ময়লা-আবর্জনার স্তূপের কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে অল্প বৃষ্টিতে পৌর এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।

স্থানীয়রা জানান, একসময়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হলেও দীর্ঘদিন থেকে দখল হয়ে যাওয়ায় প্রবাহমান ঐতিহাসিক খালটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। কৃষিকাজেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। দখলের পাশাপাশি পচা-ময়লা আবর্জনায় সবচেয়ে বেশি দূষিত হচ্ছে চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, জকসিন ও লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের মাংস বাজার, মুরগি বাজার ও ধান বাজারসহ ব্রিজ এলাকা। বাজারের পচা-ময়লা আবর্জনা খালে ফেলায় পানি পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। খালের দু-পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ দূষণ রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

টাঙ্গাইলে বাস চাপায় স্বামী-স্ত্রী নিহত

এদিকে খাল দূষণের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন মাংস ও মুরগি বাজারের ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, বাজার এলাকায় ডাস্টবিন, ড্রেন কিংবা ময়লা ফেলার ব্যবস্থা না থাকায় খালে ময়লা ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তারা বলেন, পৌরসভার সুইপারদের এসব ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কথা থাকলেও তারা তা করেন না। এ বিষয়ে কয়েকবার মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেননি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, পৌর শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী রহমতখালী খাল। জরিপ করে দখলদারদের চিহ্নিত করতে এরই মধ্যে কমিটি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় দ্রুত উচ্ছেদ অভিযানের পাশাপাশি খাল খনন করে খালটি আগের অবস্থানে ফেরানো হবে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বলেন, লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীর হাট থেকে চন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত রহমতখালী খালটি ৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে পৌর শহর বাজার থেকে চন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার রহমতখালী খাল খননের জন্য ‘৬৪টি জেলায় খাল খনন প্রকল্প’-এর আওতায় বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দখল ও দূষণমুক্তকরন সহ খালটির পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে খননকাজ করা হবে। তা ছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পৌর এলাকায় জন চলাচলের জন্য পাড় বাঁধাই করা হবে।

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, ঐতিহ্যবাহী রহমতখালী খালটি দখল-দূষণ রোধসহ দৃষ্টিনন্দন করতে খননের জন্য স্থানীয় সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে খালটির পানির প্রবাহমান রাখা এবং জন চলাচলের জন্য দুই পাড় বাঁধাই করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

Scroll to Top