কানাডার টরন্টোয় প্রবাসী বাঙালি অধ্যাপক, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী ড. মহাদেব চক্রবর্তী আর নেই। বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই বর্ষীয়ান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় বসবাস করছিলেন।
স্থানীয় সময় বুধবার (২১ মে) দুপুরে টরন্টোয় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। বাংলা ভাষাকে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী।
তার প্রচেষ্টায় বহুজাতিক ভাষার দেশে বাংলা ভাষা পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রসারে তিনি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলা স্টাডিজ’ চালুর জন্য নিজ নামে নয়, প্রয়াত স্ত্রী দীপ্তি চক্রবর্তীর নামে এককালীন ৩ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার অনুদান দিয়ে ‘দীপ্তি চক্রবর্তী বৃত্তি’ চালু করেন।
ড. মহাদেব চক্রবর্তী রাজশাহীর সন্তান। পদার্থবিজ্ঞান পড়ালেও তার হৃদয়ের ভাষা ছিল বাংলা। তিনি বলতেন, আমি পদার্থবিজ্ঞান পড়াই, কিন্তু আমার আত্মার ভাষা বাংলা। বাংলার এই মশাল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্বলবে।
কানাডায় বসবাস শুরু করেন ১৯৬৩ সালে। দীর্ঘ ছয় দশক কাটালেও তিনি আজীবন বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বজায় রাখেন। নাগরিকত্ব না নিয়েও কানাডার শিক্ষা ও সংস্কৃতিক্ষেত্রে রেখেছেন অসামান্য অবদান।
বর্তমানে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত বাঙালি শিক্ষকদের অনেকেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক, যারা ড. চক্রবর্তীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছেন। তারা নতুন প্রজন্মের জন্য এক শক্তিশালী অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অনেক বাঙালি শিক্ষার্থী বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির প্রাণবন্ত ধারক হিসেবে গড়ে উঠছেন—যাদের আড্ডায় রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাসের চরণ ধ্বনিত হয়, যাদের চিন্তায় জেগে ওঠে বাঙালির আত্মপরিচয়।