‘ওয়ার ক্রাইম’ বা যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞায় শুধু বলা হয়েছিল যে দখল করা অঞ্চলগুলোয় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ ও হত্যা এবং এসবের ইচ্ছাকৃত ও পদ্ধতিগত পরিচালনা জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হবে। সম্ভবত ট্রাইব্যুনালের সামরিক চরিত্রের কারণে এমনটা ঘটেছিল। বিচারকেরা হয়তো ভেবেছিলেন যে সামরিক একটা আদালত, যার ম্যানডেট ছিল শুধু যুদ্ধকালীন অপরাধের বিচার করা, সেটা কী করে জেনোসাইডের মতো অপরাধের বিচার করবে, যা কিনা যুদ্ধ কিংবা শান্তি—দুই কালেই সংঘটিত হতে পারে।
যে কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেন, প্রথমবারের মতো জেনোসাইড কোনো একটা আন্তর্জাতিক দলিলে জায়গা করে নেওয়ার বিষয়টি ওই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ছিল একটা অনন্য ঘটনা। পরবর্তী সময় লেমকিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৪৬ সালের ১১ ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত রেজল্যুশনে ৯৬(১) জেনোসাইডকে একটা আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বছর দুয়েকের মধ্যে সেই লেমকিনেরই কারণে জেনোসাইড আরও সুপরিসরে স্থান পায় ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত ‘ইউএন কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন অ্যান্ড পানিশমেন্ট অব দ্য ক্রাইম অব জেনোসাইড’ নামে আন্তর্জাতিক আইনে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে জেনোসাইড ধারণাটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করার পেছনে লেমকিনের অবদান আজ নানাভাবে গবেষণা করা হচ্ছে। গবেষণার নানা মাত্রা থাকলেও মোটামুটি সবাই একমত যে, প্রায় ৮০ বছর আগে লেমকিন যে চিন্তার সূচনা করে দিয়ে এক নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধের তাত্ত্বিক ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিলেন, তা আজও প্রাসঙ্গিক এবং হয়তো আরও দীর্ঘ সময় তেমনই থাকবে।
●ইমরান আজাদ সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস