ঢাকা, ০১ জুন – দীর্ঘ এক যুগ পর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন দলটির আইনজীবী ব্যারিস্টার শিশির মনির। তিনি বলেছেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা মামলার অবসান ঘটল।
রোববার (১ জুন) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। পরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শিশির মনির বলেন, ‘দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ের আইনি লড়াইয়ের সফল পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আজকের রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো।’
তিনি বলেন, ‘পলিটিক্যালি মোটিভেটেড পিআইএল-এর মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আজকের রায়ের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণমূলক সংসদের পথ সুগম হলো।’
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই রায়ের পর একটি সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাণবন্ত সংসদ গঠিত হবে, যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। আমরা প্রত্যাশা করি, আগামী সংসদ হবে প্রাণবন্ত বিতর্কে ভরপুর—যা গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দেবে।’
তিনি আরও জানান, ‘আজকে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় দ্রুত নিষ্পত্তি করতে। প্রতীকের বিষয়টিও কমিশনের কাছে রেফার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মামলার শর্ট অর্ডার চেয়েছি এবং আশা করছি আগামীকালকের মধ্যেই তা হাতে পাব। এরপর আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করব, যাতে নিবন্ধন ও প্রতীক সংক্রান্ত বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির বলেন, ‘আপিল বিভাগ যে ডাইরেকশন দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে—জামায়াতের নিবন্ধন ও যদি আরও কোনো বিষয় নির্বাচন কমিশনের সামনে থাকে, তা যেন কমিশন দ্রুত নিষ্পত্তি করে। আমরা বুঝি এটি প্রতীকের ইস্যু।’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জানুয়ারি মাসে জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রিট আবেদন করেন তরীকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি ও সম্মিলিত ইসলামী জোটের কয়েকজন নেতা। চার বছর পর ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। পরে সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেও জামায়াত চেম্বার আদালতে তা খারিজ পায়।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। এরপর দলটি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ হারায়।
তবে জামায়াত সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে, শুনানিতে মূল আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ আপিলটি খারিজ করে দেয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত পুনরুজ্জীবনের আবেদন করলে, ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট সর্বোচ্চ আদালত তা গ্রহণ করে।
এরপর শুনানি শেষে রোববার আপিল বিভাগ জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় খারিজ করে দেয়।
এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতার অভিযোগে জামায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
সূত্র: ইত্তেফাক
আইএ/ ০১ জুন ২০২৫