জলবায়ু পরির্বতনের কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও সামাজিক ঝুঁকিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের নারী ও শিশুরা। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না অনাগত শিশুও।
সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্পান, সিত্রাং, মোখার মতো প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ঘন ঘন আছড়ে পড়ছে উপকূলে। এছাড়াও আছে নদী ভাঙন, খরা, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টির প্রকোপ। ফলে বার-বার বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে উপকূলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিবারের সদস্যদের।
প্রতিনিয়ত লড়াই-সংগ্রাম করে বাঁচতে হয় উপকূলের নারী ও শিশুদের। নারী পুরুষের দিনরাত সংগ্রামে জোগাড় হয় দু’মুঠো খাবার। বেশিরভাগ মানুষের জানা নেই তাদের অধিকারের কথা।
ঘূর্ণিঝড় ,বন্যা, দাবদাহ এবং অতিবৃষ্টির কারণে অনেক দিন পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারে না এসব অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। উপকূলীয় এলাকায় দারিদ্র্যের কষাঘাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে।
বয়স্কদের পাশাপাশি এসব অঞ্চলের শিশুরা অল্প বয়সেই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নদী ভাঙনের ফলে অনেক পরিবার জন্মভিটা হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। এমন দুর্যোগের কারণে আতঙ্কে থাকে উপকূলের নারী, পুরুষ ও শিশুরা। প্রতিনিয়ত নদী ভাঙন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে বাসস্থান হারানো ভয় থাকে তাদের মনে।
জলবায়ুর এই পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা উপকূলীয় অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পাঠাতে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই গ্রাম ছেড়ে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছে শহরের দিকে।
আধুনিক এই যুগেও কুসংস্কারের কারণে জন্মের পর অবহেলায় বেড়ে ওঠে এসব অঞ্চলের মেয়ে শিশুরা। নিরাপত্তাহীনতা ও পরিবারের বোঝা মনে করায় অল্প বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় এখানকার অধিকাংশ মেয়ে শিশুদের। অল্প বয়সে গর্ভধারণের ফলে বাড়ছে মা ও শিশু মৃত্যু।
সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ায় বিগত দিনের চেয়ে নদ-নদীতে এবং পুকুরের পানিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। অতিরিক্ত লোনা পানির ব্যবহারে জরায়ু সংক্রান্ত অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে উপকূলের নারীরা। এমন অবস্থায় ঋতুস্রাব চলাকালে লোনা ও নোংরা পানির ব্যবহার কমাতে জন্মনিয়ন্ত্রণকরণ পিল খেয়ে মাসিক বন্ধ করছে উপকূলের কিশোরীরা। তাছাড়া নোনা পানি পানের কারণে নারীরা জরায়ুর রোগ, গর্ভপাত, স্পর্শকাতর স্থানে ক্ষত কিংবা ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে ভুগছেন।
অতিরিক্ত গরম ও অন্যান্য জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা শিশুদের কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় তারা ডায়রিয়া, পুষ্টিহীনতা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। প্রায়ই এলার্জি, চর্মরোগ, ভাইরাস ও ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এসব অঞ্চলের নারী ও শিশুরা। পাশাপাশি রয়েছে চিকিৎসক সংকট ও চিকিৎসা নিতে অনাগ্রহ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা সম্ভব না, তবে সকলের সম্মলিত প্রচেষ্টায় ক্ষতি কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ এখন দুর্যোগ মোকাবিলায় রোল মডেল। সরকারি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের সম্মলিত প্রচেষ্টায় সচেতনতার মাধ্যমে উপকূলীয় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব। পরিবেশ নষ্ট করে নিজের বিপদ ডেকে আনা যাবে না। যার দায়িত্ব তাকে পালন করতে হবে। তাহলেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে এনে উপকূলকে দুর্যোগ সহিষ্ণু অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।