এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
ছাত্রলীগ হলেই গণহারে গ্রেপ্তার করা যাবে এমনটা সমর্থন করেন না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন: সিস্টেমের কারণে ক্যাম্পাসে বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগ করতে হতো। তাদের অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলো।
সোমবার ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্টে সারজিস লেখেন: একটা বিষয়ে স্পষ্ট দ্বিমত প্রকাশ করতে চাই ৷
বিষয়টা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ৷ যেহেতু অন্য ক্ষেত্র নিয়ে আমার ক্লিয়ার আইডিয়া নেই তাই সেসব রিলেট না করার জন্য আহবান করছি ৷
১জুলাই এর পূর্বে এবং ১জুলাই থেকে ১৫জুলাই পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলন চলমান ছিল সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল ৷ এই আন্দোলনটা মেইনলি ১৫ তারিখ পর্যন্ত হলের ছেলেমেয়েরাই নিয়ে গিয়েছে ৷
যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্পর্কে ধারনা রাখেন তারা খুব ভালো করে জানেন এখানে হলে থাকতে হলে অবশ্যই ছাত্রলীগ করতে হতো ৷ তাদের প্রোগ্রাম, গেস্টরুম করতে হতো ৷ গনরুমে থাকতে হতো ৷ সেজন্য হলে যারা থাকতো তাদের অধিকাংশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই এসব করতো ৷
এবার আরেক প্রসঙ্গে আসি ৷ হলের যে ছাত্রলীগের কমিটি হতো এখানে প্রায় ৮০% শিক্ষার্থী কমিটিতে থাকতো কিছু কারনে-
যেমন:
১.ভালো একটা রুম বা সিট যেন পাওয়া যায়
২.যেন চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকা যায়
৩. অন্যরা যেন তার উপর অন্যায় না করে বা ট্যাগ না দেয় ৷
বাকি ২০% এর মধ্যে অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করতো, অনেকে ভিন্ন মতের লোকদের উপর অত্যাচার করতো, অনেকে ক্যান্ডিডেট হতো, অনেকে একটু ফাপর নিয়ে চলতো৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এই প্রথম ধাপের ১৬-১৭ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ওই ৮০% স্টুডেন্ট ৷ তারা যেমন পোস্টেড ছিল তেমনি হলের তুলনামূলক ক্লিন ইমেজ প্রভাব রাখা ফেইস ছিল ৷ তারা হল থেকে ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলেই আদার্স নন-পোস্টেড সাধারন শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে বের হয়ে আসতে পেরেছিল এবং একারণেই ক্যান্ডিডেটরা হল থেকে প্রোগ্রাম নিয়ে আন্দোলনে আসা আটকাতে পারেনি ৷ এই পোস্টেড ছেলেরা হল থেকে এক হয়ে বের না হলে নন-পোস্টেডরাও এক হয়ে বের হয়ে আসার সাহস করতে পারতো না ৷ ওই গার্টস আর বোল্ডনেস এই ছেলেগুলাই শো করতে পারে ৷ হলের পার্সপেক্টিভে সত্য এটাই যে, এই পোস্টেড তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের হলের ছেলেরা আন্দোলনে এসেছিলো বলেই ১জুলাই থেকে ১৫ জুলাই সম্ভব হয়েছিলো এবং আন্দোলনটাকে প্রাথমিকভাবে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী ট্যাগ দেওয়া যায়নি ৷
১৫জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন না আসলে ৫ আগস্ট কখনো সম্ভব হতো কিনা সে বিষয়ে ঢের সন্দেহ আছে ৷
এখন প্রশ্ন হচ্ছে হলের এই পোস্টেড ছেলেগুলোকে আমি ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলবো কিনা ৷
উত্তর : “ফেলবো না ৷”
যারা ১জুলাই থেকে আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে ন্যায়ের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে তারা তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে ৷ সত্য এটাই যে, এই আন্দোলন সফল না হলে এই ছেলেগুলোকেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো ৷ বিশ্বাসঘাতক ট্যাগ দেওয়া হতো ৷
যে সিস্টেমের কারণে এদেরকে বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হয়েছে, পোস্ট নিতে হয়েছে সেই সিস্টেমের জন্য দায়ী হলে আপনাদের সবাইকে দায়ী হতে হবে ৷ কারন আপনারা চুপ ছিলেন ৷ হলে, ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন ওদের সাথে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাঁধা দেননি ৷ ওরা যদি সেইফটি এন্ড সিকিউরিটির জন্য পোস্ট নেয় তবে আপনিও নিজের গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন ৷ বরং যখনই সুযোগ হয়েছে ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে ৷ আর তখনও আপনি নিরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন ৷
এই ৮০% ছেলের কেউ যদি পূর্বে কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে তার শাস্তি হোক, কেউ যদি পরে কোনো অন্যায়ে জড়িত হয় তবে তদন্ত সাপেক্ষে তারও শাস্তি হোক ৷ কিন্তু যখন দরকার ছিল তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণহারে গ্রেফতার হবে এটা কখনোই সমর্থন করিনা ৷ এটা হতে পারেনা ৷
যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের সকল বাঁধা উপেক্ষা করে আমার সাথে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছে তারা আমার ভাই ৷ ২৪ এর অভ্যুত্থানের যোদ্ধা ৷ আমি তাদের পক্ষে থাকবো ৷
সত্য সত্যই ৷
কে কি বললো তাতে আমার কিছু যায় আসেনা ৷