চুলের ঝুঁটি কেটে ইরানি নারীদের সমর্থন জানালেন ইইউ এমপি

চুলের ঝুঁটি কেটে ইরানি নারীদের সমর্থন জানালেন ইইউ এমপি

একবিংশ শতাব্দীতে এসে এখনো জীবনের ন্যুনতম স্বাধীনতা পাচ্ছেন না ইরানের নারীরা। পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে গোটা দেশ বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। এই বিক্ষোভে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, তারকা সংগীতশিল্পীসহ বিভিন্ন দেশের নারীরা নিজেদের চুল কেটে ইরানি নারীদের সমর্থন জানাচ্ছেন।

এবার এই তালিকায় যুক্ত হলেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য আবির আল-সাহলানি। ইরাকি বংশোদ্ভূত সুইডিশ এই নারী ইইউ অ্যাসেম্বলিতে বক্তৃতা শেষে নিজের চুলের ঝুঁটি কেটে ফেলছেন।

বুধবার ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে অধিবেশনের বৈঠকে ইরানে নারীদের নিপীড়নের বিষয়টি উল্লেখ করে সাহলানি বলেন, ‘ইরান মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত, আমাদের ক্রোধ অত্যাচারীদের চেয়ে বেশি হবে। যতক্ষণ না ইরানের নারীরা মুক্ত হবে, আমরা তাদের পাশে থাকব।’

বক্তব্যের শেষদিকে আচমকাই নিজের ঝুঁটি কেটে ফেলে সাহলানি কুর্দি ভাষায় বলেন, ‘জিন, জিয়ান, আজাদি’; যার অর্থ- নারী, জীবন, স্বাধীনতা।

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পরই ইরানে নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। ইরানের ধর্মীয় শাসকদের কাছে নারীদের জন্য এটি অতিক্রম-অযোগ্য সীমারেখা। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।

হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে সঠিক নিয়মে পোশাকবিধি অনুসরণ না করা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে নিষিদ্ধ করা হয়।

এরপর গত ১৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে আমিনিকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব পরেননি।

পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন দিন পর শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়। এরপরই উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা ইরান। ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ দিয়ে চলছে প্রতিবাদ।

অনেকেই হিজাব খুলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, কেউ কেউ নিজেদের চুল কেটে ইরান সরকারের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। #HairForFreedom ট্যাগে প্রতিবাদী এসব ইরানি নারীর প্রতি সংহতি জানাচ্ছেন তুরস্ক, লেবানন ও ফ্রান্সের নারীরাও।

Scroll to Top