চীনের রাজধানী বেইজিং এর হৃদয়ে দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এক নিষিদ্ধ শহর বা ফরবিডেন সিটি। প্রায় ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি ছিল সম্রাটদের রাজকীয় প্রাসাদ, যেখানে প্রবেশ ছিল সাধারণ মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
১৪০৬ সালে মিং রাজবংশের সম্রাট ইয়ংলে এর নির্দেশে এই মহাপ্রাসাদের নির্মাণ শুরু হয়। ১৪২০ সালে সম্পূর্ণ হয় এর কাজ।চারপাশে ১০ মিটার উঁচু প্রাচীর আর ৫২ মিটার চওড়া খাল দিয়ে ঘেরা এই শহর একসময় ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত রাজপ্রাসাদ।
প্রায় ৭২০,০০০ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই কমপ্লেক্সে রয়েছে ৯,০০০-এরও বেশি কক্ষ। প্রতিটি স্থাপত্যই চীনা ফেং শুই দর্শনের প্রতিফলন লাল রঙ শক্তির প্রতীক, আর সোনালী রঙ রাজকীয় ক্ষমতার প্রতীক।এখানে বসেই চীনের ২৪ জন সম্রাট শাসন করেছেন মিং ও ছিং রাজবংশের সময়। সম্রাট ছিলেন আকাশের পুত্র, আর এই প্রাসাদকে ধরা হতো পৃথিবীর কেন্দ্র।
এই শহরটিকে নিষিদ্ধ শহর বলার কারণ হলো, মুলত এখানে সেই সময়ের সম্রাট স্বয়ং বসবাস করতেন। ফলে অন্যান্য জায়গার চেয়ে এখানে তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিল সরাসরি। এখানে তাঁর কথাই ছিল আইন। সাধারণ প্রজা বা রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যের জন্যও শহরটিতে প্রবেশের অধিকার ও চলাচল ছিল সীমিত। শুধু সম্রাটই যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে যেতে পারতেন। এ কারণে এটিকে ‘নিষিদ্ধ শহর’ বলা হয়।
১৯১২ সালে শেষ সম্রাট পু ই সিংহাসন ত্যাগ করার পর প্রাসাদ হারায় তার রাজনৈতিক মর্যাদা। আজ এটি পরিচিত প্যালেস মিউজিয়াম নামে যেখানে সংরক্ষিত আছে লক্ষাধিক শিল্পকর্ম, প্রত্নবস্তু আর চীনের রাজকীয় ইতিহাস।
১৯৮৭ সালে ইউনেসকো এটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ভবন, যা মূলত কাঠের বিম, জটিল খোদাই ও হলুদ-চকচকে টাইলস দিয়ে নির্মিত। ভবনগুলোর নকশা শুধু দর্শনীয়ই নয়, এটি প্রাচীন চীনা নীতি ও ফেং শুইয়ের প্রভাবও বহন করে। এখন এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শিত জাদুঘরগুলোর একটি।চীনের নিষিদ্ধ শহর শুধু একটি প্রাসাদ নয়, বরং শক্তি, ঐতিহ্য আর হাজার বছরের ইতিহাসের জীবন্ত প্রতীক।