চিকিৎসার জন্য লন্ডনে মাল্টিপল ভিসার আবেদন খালেদা জিয়ার

চিকিৎসার জন্য লন্ডনে মাল্টিপল ভিসার আবেদন খালেদা জিয়ার

ফলোআপ চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি তার দল, পরিবার কিংবা চিকিৎসকরা। তবে চিকিৎসার জন্য যেকোনো সময় তাকে আবার লন্ডনে যেতে হতে পারে।

চিকিৎসার জন্য লন্ডনে মাল্টিপল ভিসার আবেদন খালেদা জিয়ারচিকিৎসার জন্য লন্ডনে মাল্টিপল ভিসার আবেদন খালেদা জিয়ার

কিন্তু বেগম জিয়ার লন্ডনের ভিসার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তাই তার জন্য নতুন করে লন্ডনের মাল্টিপল ভিসার আবেদন করা হয়েছে। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তাও চেয়েছে বিএনপি। এ জন্য সম্প্রতি দলের পক্ষ থেকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে। বিএনপির একাধিক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার গণমাধ্যমকে বলেন, ম্যাডামের লন্ডনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মাল্টিপল ভিসার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তবে ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ম্যাডামের ফের লন্ডনে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ম্যাডামের লন্ডনে ফলোআপ চিকিৎসার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, হার্ট, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে ২০২১ সালের নভেম্বরে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হন তিনি। এর পরপরই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে বিশেষায়িত সেন্টারে পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তখন বলেছিলেন, জরুরি ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বারবার আবেদন জানানো হলেও তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার তা আমলে নেয়নি।

প্রতিবারই সাময়িক মুক্তির শর্তের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তির ক্ষেত্রে দুই শর্তের একটি ছিল, খালেদা জিয়াকে দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে।

পরবর্তীতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার পথ সুগম হয়। পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান তিনি।

এরপর প্রয়োজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাতার আমিরের পাঠানো বিশেষ বিমানে (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) গত ৮ জানুয়ারি লন্ডনে পৌঁছান খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনও ছিলেন। হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি হন।

লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জন প্যাট্রিক কেনেডি ও ডা. জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। লন্ডন ক্লিনিকে ১৭ দিনের চিকিৎসা শেষে ২৫ জানুয়ারি কিংস্টনে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় যান খালেদা জিয়া।

ছাড়পত্র দেওয়ার সময় অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বয়স বিবেচনায় লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরা ম্যাডামের লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।

প্রায় সাড়ে তিন মাস তারেক রহমানের বাসায় থাকাকালীন লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে বেগম জিয়ার চিকিৎসার ফলোআপ হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ চার মাস পর লন্ডন থেকে দুই পুত্রবধূকে সাথে নিয়ে গত ৬ মে দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। বাসায় বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

তবে শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় গত ২৩ জুলাই দিবাগত রাতে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে জরুরি ভিত্তিতে শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই রাতেই আবার তিনি গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরে আসেন।

এভারকেয়ার হাসপাতালে থাকার সময় ফলোআপ চিকিৎসার জন্য বেগম জিয়াকে আবার লন্ডনে নিয়ে যাওয়া যায় কিনা, সে বিষয়ে তার মেডিকেল বোর্ডের কেউ কেউ আলোচনা করেন। এরপরই খালেদা জিয়ার জন্য নতুন করে লন্ডনের মাল্টিপল ভিসার আবেদন করা হলো।

Scroll to Top