চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি, স্বস্তি ফিরছে রিজার্ভে

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি, স্বস্তি ফিরছে রিজার্ভে

জুমবাংলা ডেস্ক : রফতানি আয় ও প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে দেশের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টস (বিওপি) পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই–এপ্রিল) বিওপি ঘাটতি কমে ৬৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি, স্বস্তি ফিরছে রিজার্ভেচলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি, স্বস্তি ফিরছে রিজার্ভে

এক মাস আগেও এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১০৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৫৫৭ কোটি ডলার এবং তার আগের বছর ছিল ৮২২ কোটি ডলার। অর্থাৎ মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে বিওপি ঘাটতি কমেছে প্রায় ৭৫০ কোটি ডলার।

এই অগ্রগতি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। অতীতে, বিশেষ করে আগের সরকারের শেষ দুই বছরে রেকর্ড পরিমাণ বিওপি ঘাটতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে মারাত্মক চাপ তৈরি হয়েছিল। তবে সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের কিছু কার্যকর নীতিগত হস্তক্ষেপ ও বাজার ব্যবস্থাপনার ফলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে শুরু করে।

রফতানিতে টানা প্রবৃদ্ধি

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেশের পণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৬১ শতাংশ বেশি।

তৈরি পোশাক খাত এখনও রফতানির প্রধান চালিকাশক্তি হলেও কৃষিপণ্য, ওষুধ এবং হালকা প্রকৌশলপণ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের ধাক্কা সামলেও ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি বাজার ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ, যা একটি ইতিবাচক দিক।

রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড

একই সময় প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ, অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রবাহও ঊর্ধ্বমুখী। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই–এপ্রিল সময়ে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হুন্ডির ব্যবহার কমে আসা, বৈধ চ্যানেলের ডিজিটালাইজেশন এবং প্রণোদনার পরিসর বাড়ানোয় রেমিট্যান্সে এই ইতিবাচক ধারা এসেছে। প্রাথমিক ইঙ্গিত অনুযায়ী, মে মাসেও রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল রেকর্ড পরিমাণ, যা ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ইঙ্গিত দেয়।

রিজার্ভে ফিরছে আস্থা

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতিতেও ফিরতে শুরু করেছে আস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী, ২৯ মে পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫.৮০ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগে ছিল ২৪.২২ বিলিয়ন ডলার।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলেও রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০.৫৭ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮৫ কোটি ডলার বেশি।

চলতি ও আর্থিক হিসাবের চিত্র

চলতি হিসাব বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স-এর ঘাটতিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এই ঘাটতি ১৩৯ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা এক বছর আগে ছিল ৬৬১ কোটি ডলার এবং তার আগের বছর ছিল ১ হাজার ১৬৩ কোটি ডলার।

অন্যদিকে, আর্থিক হিসাব (ফিনান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) যেখানে বছরের শুরুতে ঘাটতি ছিল, সেখানে এখন দেখা যাচ্ছে ১৯৬ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত। যদিও আগের বছরের একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ৪৫৪ কোটি ডলার, তবুও ঘাটতি কাটিয়ে আবার ইতিবাচক স্থানে আসা একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

বাজারভিত্তিক বিনিময় হারেও স্থিতিশীলতা

বাংলাদেশ ব্যাংক মে মাসে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করলেও ডলারের সরবরাহ বাড়ায় বিনিময় হারে তেমন অস্থিরতা দেখা যায়নি। ফলে টাকার মানও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।

সামনের পথে করণীয়

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে রফতানি বাজারে বহুমুখীকরণ, প্রবাসী আয়ের ডিজিটাল চ্যানেল সম্প্রসারণ এবং রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের পথও সুগম করতে হবে।

অর্থনীতির গভীরে যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছিল, এখন তা কাটিয়ে ওঠার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে এই উন্নয়ন। রফতানি ও রেমিট্যান্সের ওপর ভিত্তি করে লেনদেন ভারসাম্য ও রিজার্ভ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে—যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতার বার্তা দিচ্ছে।

Scroll to Top