এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত হারিছুর রহমান হারিছকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সন্ত্রাসীদের গডফাদার ও ‘গৌরনদীর দানব’ হিসেবে পরিচিত হারিছের ফাঁসির দাবিতে ঝাড়ু ও জুতা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শত শত মানুষ।
হাসানাতের আশীর্বাদে হারিছ বিনা ভোটে টানা তিনবার জেলার গৌরনদী পৌরসভার মেয়র ছিলেন। এছাড়াও গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন হারিছ। গত ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে থাকা ‘গৌরনদীর দানব’ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হারিছুর রহমান হারিছকে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর রামপুরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ।
তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া বলেন, হারিছুর রহমানের বিরুদ্ধে বরিশালে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ বিভিন্ন আইনে তিনটি মামলা রয়েছে। তাকে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ খুঁজছিল। মঙ্গলবার সকালে ঢাকার রামপুরা এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওসি আরও জানান, ওইদিনই বরিশালে এনে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে হারিছুর রহমানকে আদালতে হাজির করা হবে।
অপরদিকে হারিছের গ্রেপ্তারের খবরে গৌরনদীজুড়ে মিস্টি বিতরণ করেছে হারিছ বিরোধী লোকজনে। পাশাপাশি গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে ঘন্টাব্যাপী অবরোধ করে সন্ত্রাসীদের গডফাদার হারিছের ফাঁসির দাবিতে ঝাড়ু ও জুতা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শত শত হারিছ বিরোধী লোকজনে। একইদিন দুপুরে মহাসড়কের গৌরনদীর ভুরঘাটা, বার্থী, মাহিলাড়া, উপজেলার নলচিড়া ও সরিকলে হারিছের ফাঁসির দাবিতে ঝাড়ু হাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে হারিছের নির্যাতনের স্বীকার শত শত নারী-পুরুষ।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল শেষে হারিছের ফাঁসির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান খান মুকুল, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ সরোয়ার আলম বিপ্লব, সদস্য সচিব শরীফ জহির সাজ্জাদ হান্নান, সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক সফিকুর রহমান শরীফ স্বপন, সাবেক সভাপতি এসএম মনির উজ জামান মনির, সদস্য সচিব ফরিদ মিয়াসহ অন্যান্যরা। বক্তারা সাবেক মেয়র হারিছকে গৌরনদীর সন্ত্রাসের গডফাদার আখ্যায়িত করে তার ফাঁসির দাবি করেন।
সূত্রমতে, সাবেক সাংসদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সকল অপকর্মের প্রধান হোতা হারিছুর রহমানের নির্যাতন থেকে বিগতদিনে বিরোধী পক্ষের পাশাপাশি রেহাই পায়নি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। হারিছ তার ভাইদেরও বাবার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। স্থানীয় পেশাজীবী গণমাধ্যমকর্মী ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোও হারিছের হাত থেকে রেহাই পায়নি বলে জানা গেছে।
নিজ বাড়িতে টর্চার সেল বানিয়ে সেখানে রাতভর বিচারের নামে হারিছ বিরোধীদের প্রকাশ্যে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো। ক্ষমতার প্রভাবে হারিছুর রহমান স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারি সকল উন্নয়নমূলক কাজ থেকে কমিশন বাণিজ্য, বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও দখলের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।