পশ্চিমা দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের দেশেও বাড়ছে শরীর ও মন চাঙাকারী পানীয় কফি গ্রহণ। কফির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া ও অর্থকরি ফসল হওয়ায় কফি রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার বা ৮ হাজার কোটি টাকার কফি রফতান করা হবে। এ লক্ষ্যেই কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা এবং ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ বিষয়ক’ প্রকল্প পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম।
প্রকল্প পরিচালক বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের দেশে ভালো মানের কফি চাষ সম্ভব। আর এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর কফি চাষ সম্ভব। সমতল অঞ্চলের সিলেট, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এবং শেরপুর জেলায়ও কফি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে পাহাড়ি এলাকাসহ সমতলের বিভিন্ন অঞ্চলে কফি চাষ শুরু হয়েছে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে কফিচাষ শুরু করেছে।তারা নিজ উদ্যোগে ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে বীজ এনে বীজ থেকে চারা উৎপাদন ও কলম তৈরি করে বিক্রি করছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু কফি চাষের অনুকূলে হওয়ায় ভালো ও উন্নত স্বাদের ও ঘ্রানের কফি চাষ এখানে সম্ভব। কফি চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। অ্যারাবিকা কফি চাষের জন্য ১৫-২৪ ডিগ্রি এবং রোবাস্টা জাতের কফির জন্য ২৪-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা প্রয়োজন, যা আমাদের দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বিদ্যমান রয়েছে।
শহিদুল ইসলাম জানান, কফি গাছ রোপণের ৩-৪ বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। তবে ৬-৭ বছর বয়সে ফল বেশি পাওয় যায়। যা ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ফুল আসে এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি ৪-৫ কেজি তাজা কফি ফল থেকে ১ কেজি শাঁসযুক্ত কফি বিন পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে কফি কাঁচা ও বিন হিসাবে বাজারজাত করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে কাঁচা প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা এবং শুকনা বিন প্রতি কেজি ১২০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়ে থাকে। কৃষকরা শুধুমাত্র ফসল উৎপাদন করলেই হবে। কাঁচা বা শুকনা দুটোই কেনার জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে আগে কৃষকরা যতটুকু চাষ ও প্রক্রিয়াজাত করছে তার সবটুকুই সনাতন পদ্ধতিতে। এখন প্রকল্প থেকে সকল কৃষকদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণসহ দেয়া হচ্ছে কারিগরী সহায়তা। প্রকল্পভুক্তদের সার বীজ থেকে শুরু করে সব ধরণের সহায়তা দিচ্ছি সরকার।
কফি চাষ অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন হবে তেমনি এটি বহুমাত্রিক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ বলে জনগণের পুষ্টি চাহিদা ও পূরণ করবে। এক কাপ ব্ল্যাক কফি (১২৫ মিলিলিটার) কার্যত কোনও ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট বা প্রোটিন থাকে না সুতরাং এর শক্তির পরিমাণ কেবল ১-২ কিলোক্যালরি। কফিতে অনেকগুলো খনিজ এবং ভিটামিন রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রতি বছর ৭-৮ শ কোটি টাকার কফি আমদানি করা হয়ে থাকে। প্রকল্পে মাধ্যমে আগামী ১০ বছরের মধ্য ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের কফি রফতানির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করারহয়েছে সেই অর্জনের অংশ হিসেবে প্রকল্প মেয়াদে নতুন করে ৪ হাজার হেক্টর জমি কফি চাষের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে ১০০০ হেক্টর জমিতে কফিগাছ রোপন করা হয়েছে। ২৫ সালের মধ্যে সরকারি ভাবে আরো ১৫ শ হেক্টর জমি চাষের আওায় আা হবে। সেসরকারি ভাবেও অনেক প্রতিষ্ঠান কফি চাষ করছে তার পরিমাণ ও প্রায় ৫০০ হেক্টর হবে। প্রতি হেক্টরে প্রায় ১১৩০টি গাছরোপন করা হবে। প্রকল্প মেয়াদে বা ২০২৫ সালের মধ্য ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করে প্রায় ১০ হাজার টন কফি উৎদন করা সম্ভব। যার বাণিজ্যক মূল্য প্রায় ১ হাজার ২ শ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু কফি চাষের অনুকূল, তবে ভালো ও উন্নত স্বাদের ও ঘ্রাণের কফি পেতে এর চাষ সম্প্রসারণের জন্য পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। কফি চাষের উপযোগী মাটি হলো গভীর, ঝুরঝুরে, জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ ও হিউমাস সমৃদ্ধ, হালকা অম্ল মাটি (পিএইচ ৪.৫-৬.৫)। কফি হালকা ছায়ায় ভালো হয় এবং অতিরিক্ত সার ও সেচের তেমন প্রয়োজন হয় না, যা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। রৌদ্রোজ্জ্বল স্থানে চাষ করলে সার ও সেচের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া এর সাথে আন্তঃফসল হিসেবে পেঁপে, আনারস, গোলমরিচ অনায়াসে চাষ করা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হর্টিকালচার উইং এর তথ্য মতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কফির উৎপাদন এলাকা ছিল প্রায় ১১৮.৩ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন প্রায় ৫৫.৭৫ টন। বর্তমানে কৃষকগণ যতটুকু চাষ ও প্রক্রিয়াজাত করছে তার সবটুকুই সনাতন পদ্ধতিতে করছে যার ফলন অনেক কম এবং লাভও কম হয়। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আমদানিকৃত গ্রিন কফির পরিমাণ হলো ৩২.৫১৭ টন।