‘আমার নানী সবসময় গোল্ড জমিয়ে রাখতেন। সেই গোল্ড সুরক্ষিত রাখতেও নানা কসরৎ করতেন। বড় খালার বিয়ের সময় গোপন সিন্দুক থেকে প্রথম দফায় বের করলেন সঞ্চয় করা সেই গোল্ড। দ্বিতীয় দফায় আবার বের করলেন ছোট খালার বিয়ের সময়। নানী সবসময় বলতেন, যেকোন প্রয়োজনে বড় ভরসা হয়ে ওঠে সঞ্চয় করা গোল্ড।’
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী সামিহা হাসান বলছিলেন তার নানীর গল্প। এর মধ্য দিয়েই তিনি শিখেছেন গোল্ড সঞ্চয়ের গুরুত্ব। তবে হু হু করে বাড়তে থাকা গোল্ডের দাম দেখে কেনার সাহস পান না।
হঠাৎ জানতে পারেন, ৫০০ টাকাতেও গোল্ড কেনার সুযোগ আছে। ধীরে ধীরে এটি বাড়াতে পারবেন। আর এতেই জমতে থাকবে তার সঞ্চয়ের গোল্ড। থাকবেও সুরক্ষিত। আলাদা করে গোপন সিন্দুক রাখা লাগবে না বাসায়। কেনাও যাবে খুব সহজে।
সামিহার মতো আরও অনেকেই তাই উৎসাহী হচ্ছেন গোল্ড সঞ্চয়ে। সবার জন্য এ সুবিধাটি নিয়ে এসেছে গোল্ড কিনেন নামের একটি অ্যাপ। বাংলাদেশের প্রথম গোল্ড কেনার অ্যাপ এটি। হাতের মুঠোফোন ব্যবহার করেই যে কেউ কিনতে পারছেন চাহিদামতো গোল্ড।
গোল্ড কেনার মাধ্যমে সঞ্চয়কে নতুন মাত্রা দিতে এবং সবার জন্য গোল্ড জমানোকে আরো বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের ও সহজ করতে কাজ করে যাচ্ছে গোল্ড কিনেন। ২০২২ সালে তিন উদ্যোক্তা শুরু করেন গোল্ড কিনেন অ্যাপ। বিশ্বের অনেক দেশেই এমন অ্যাপ প্রচলিত থাকলেও বাংলাদেশে এটিই প্রথম। এই অ্যাপ দিয়ে মুঠোফোন থেকেই গোল্ড সঞ্চয় করতে পারছেন যে কেউ। বাণিজ্যিকভাবে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করা হয়। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে ৪৩ জন সদস্য কাজ করছেন।
গ্রাহক রাফি মিজান খান বলেন, প্রথমে এক গ্রাম, দুই গ্রাম করে নিয়ে দেখেছি অ্যাপটা কেমন। যখন দেখলাম সিস্টেমেটিক ওয়েতেই সবকিছু হচ্ছে, তখন এটাকে নির্ভরযোগ্য মনে হয়েছে।
রিফাহ হাসনাত পড়ালেখা করছেন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার মতে, অনেক তরুণ হয়তো সরাসরি দোকানে গিয়ে গোল্ড কিনতে দ্বিধা বোধ করে বা তাদের কাছে হয়তো একসাথে বড় অঙ্কের অর্থ নাও থাকতে পারে। এই অ্যাপের মাধ্যমে তারা ঘরে বসেই অল্প অল্প করে গোল্ড সঞ্চয় করতে পারবে।
গোল্ড কিনেন অ্যাপে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে অফিসিয়াল বাজারমূল্যে ২২ ক্যারেট হলমার্ক প্রত্যয়িত গোল্ড ক্রয় ও সঞ্চয় করা যায়। অ্যাপে ‘অটো গোল্ড সেভ’ প্ল্যান ব্যাবহার করেও গোল্ড সঞ্চয় করতে পারবেন। এই প্ল্যানের সাথে এক হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ৩, ৬ বা ১২ মাসের জন্য গোল্ড সঞ্চয় করা যায়। অ্যাপে ক্রয়কৃত গোল্ড নিরাপদে সংরক্ষিত থাকবে গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স দ্বারা বীমাকৃত সিকিউরেক্স প্রাঃ লিঃ এর ব্যাংক-গ্রেড ভল্টে।
আপনার গোল্ডটি আপনি প্রয়োজনমত উত্তোলনও করতে পারবেন। সর্বনিম্ন এক গ্রাম থেকে শুরু করে উত্তোলন করতে পারবেন ১, ৫ ও ১০ গ্রামের গোল্ড বার রুপে এবং ২ ও ৪ গ্রামের গোল্ড কয়েন রূপে। আবার প্রয়োজনে যেকোনো সময়ে অ্যাপে সঞ্চিত গোল্ড প্রতিদিনের বাজারমূল্যে বিক্রয় করে সমপরিমাণ অর্থমূল্য বুঝে নিতে পারবেন আপনার মোবাইল ওয়ালেট বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। বার বা কয়েন দিয়ে আপনার পছন্দ অনুযায়ী অলঙ্কার বানিয়ে নিতে পারবেন। অনেকেরই প্রশ্ন থাকে গোল্ডের ক্যারেট নিয়ে। গোল্ড কিনেন থেকে ক্রয়কৃত সকল গোল্ড সম্পূর্ণরূপে হলমার্ক এবং সার্টিফাইড ২২ ক্যারেট গোল্ড। অ্যাপে সঞ্চয়কৃত গোল্ড, গ্রাহক যখন উত্তোলন করবেন; সেই গোল্ড বার বা কয়েনে গোল্ড কিনেনের হলমার্ক সীল এবং সাথে ‘বাংলা গোল্ড’ দ্বারা প্রদত্ত একটি প্রত্তয়নি পত্র (ইনভয়েস) থাকবে যেখানে পণ্যের ওজন, শুদ্ধতা এবং ক্যারেট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়া থাকে।
রাজধানীর একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত গোল্ড কিনেনের আরেক গ্রাহক জানান, বিনিয়োগকারী হিসেবে পণ্যের স্থিতিশীলতা, রিটার্নের নিশ্চয়তা, বিনিয়োগের তরলতা সবকিছুর ক্ষেত্রেই গোল্ড পছন্দের সঞ্চয়।
গোল্ড কিনেন সরকার অনুমোদিত আইনগত প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সকল নীতিমালা অনুসরণ করে এবং সকল প্রকারের প্রয়োজনীয় প্রত্যয়নি সহকারে এই কোম্পানিটি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশে গোল্ড প্রকিউরমেন্ট, স্টোরেজ এবং ডিস্ট্রিবিউশন অর্ডারের অধীনে সরকার গোল্ড কিনেন অ্যাপকে বাংলাদেশে বৈধভাবে গোল্ড ক্রয়, বিক্রয় এবং সংরক্ষণ করার জন্য গোল্ড ডিলিং লাইসেন্স প্রদান করেছে।
দুই বছরে গোল্ড কিনেন অ্যাপে নিবন্ধিত গ্রাহক প্রায় দুই লাখ। গোল্ড সঞ্চয়কে সহজ, নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত করতেই কাজ করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।