গুঁড়িয়ে দেওয়া মসজিদ পুনর্নির্মাণ

গুঁড়িয়ে দেওয়া মসজিদ পুনর্নির্মাণ

ইরাকের মসুল শহরের ঐতিহাসিক আল নুরি মসজিদ পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এই মসজিদের হেলে থাকা মিনার পুনর্নির্মাণের পর আবারও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এটি মসুলের সবচেয়ে বিখ্যাত সুন্নি মসজিদ। ২০১৭ সালে আইএসের হামলায় মসজিদটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, ইউনেসকোর উদ্যোগে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের অর্থায়নে আল নুরি মসজিদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপত্য পুনঃ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অনেক পুরোনো মসুল শহরের জটিল অলিগলির মাঝে ৮৫০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা আল নুরি মসজিদের মিনার এই শহরের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। ২০১৭ সালে ধ্বংস করার আগে এটি ছিল স্থানীয় শাকির মাহমুদের মতো হাজারো বাসিন্দার পরিচয়ের অংশ।

মিনারটিকে আবারও নতুন করে গড়ে তোলার বিষয়ে ৫৫ বছর বয়সী শাকির বলেন, ‘এটি আমাদের আত্মার পুনর্জন্ম। মসুলের এসব নিদর্শন আবার উঠে দাঁড়ানো দেখে আমরা আনন্দিত। এটি আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা জাগাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

শহরটি আইএসের দখলে থাকা অবস্থায় এবং তাদের পতনের সময় এগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে মসুল দখল করে নিয়েছিল আইএস বাহিনী। পরে তারা ইসলামি, খ্রিস্টান, ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোকে বিধর্মী স্থাপনা আখ্যা দিয়ে ধ্বংস করতে শুরু করে।

২০১৮ সালে ‘রিভাইভ দ্য স্পিরিট অব মসুল’ প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছিল ইউনেসকো। এই প্রকল্প শুধু স্থাপত্য নয়, মানবিক ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের ওপরও গুরুত্ব দেয়।

গত জানুয়ারিতে ইউনেসকোর মহাপরিচালক আদ্রে আজুলে ঘোষণা দেন, আল নুরি মসজিদের মিনার ও দুটি গির্জার পুনঃ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম মসুল তার প্রকৃত পরিচয়ে ফিরে আসুক। সংযোগের এই শহরে সহাবস্থান ও সংস্কৃতির শক্তির মাধ্যমে পুনর্গঠন সম্ভব।’

জানা গেছে, ধ্বংসস্তূপ সরানো, বিস্ফোরক পরিষ্কার এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যের মূল অংশ যতটা সম্ভব সংরক্ষণ করাই ছিল কর্তৃপক্ষের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

গুঁড়িয়ে দেওয়া মসজিদ পুনর্নির্মাণ
আল নুরি মসজিদের মিনার পুনর্নির্মাণের পর, ছবি: সংগৃহীত



আল নুরি মসজিদের ৪৫ মিটার উঁচু মিনারটি পুনরায় ঐতিহ্যবাহী ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সংযুক্ত করা হয়েছে পুরোনো কাঠামোর বেঁচে থাকা অংশগুলোকেও।

ইউনেসকোর প্রকল্প পরিচালক মারিয়া রিটা অ্যাসেটোসো বলেন, ‘এটি দীর্ঘ, কঠিন, কিন্তু সুন্দর ও ফলপ্রসূ একটি যাত্রা। আমি আশা করি, এটি মসুলের মানুষকে নতুন আশা দেবে।’

১১৭২ সালে আল নুরি মসজিদের নির্মাণকাজের আদেশ দেন নুরুদ্দিন আল জঙ্গী। একসময় তিনি আলেপ্পো ও মসুল শাসন করেছেন। তার নামেই এ মসজিদের নামকরণ হয়। ইরাকে যে কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থাপনা মূল কাঠামো নিয়ে টিকে ছিল, সেগুলোরই একটা ছিল আল-নুরি মসজিদ।

এর হেলে পড়া আল-হাবদা মিনার ইরাকের ১০ হাজার দিনারের নোটে অঙ্কিত ছিল। পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এ মিনার ছিল মসুলের অন্যতম প্রতীক।

আল-নুরি মসজিদে দাঁড়িয়ে আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি ২০১৪ সালে বক্তৃতা দেন এবং সেটাই ছিল জনসমক্ষে তার একমাত্র বক্তব্য।

Scroll to Top