‘ক্রীড়াঙ্গনে দুর্নীতিমুক্ত করে স্বচ্ছতা ফেরানো হবে’ | চ্যানেল আই অনলাইন

‘ক্রীড়াঙ্গনে দুর্নীতিমুক্ত করে স্বচ্ছতা ফেরানো হবে’ | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ‘দুর্নীতিতে জর্জরিত’এই খাতে স্বচ্ছতা ফেরানোর স্বপ্ন দেখছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বলেছেন, ‘নতুন করে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ নেই, সবখানেই ফেরানো হচ্ছে স্বচ্ছতা।’

চ্যানেল আইয়ের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এই কথা বলেছেন। সেইসঙ্গে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে গত একমাসে সম্মুখীন হওয়া নানা চ্যালেঞ্জের কথা।

‘আমাদের যে প্রথম মাসটা, তা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল । দীর্ঘ ১৬ বছরে মানুষের যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, বিভিন্ন দাবি, বৈষম্য সবকিছু নিয়ে সবাই আন্দোলন করেছেন, আমাদের কাছে প্রত্যাশা করেছেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে দেশে। সবাই তাদের দাবি-দাবা নিয়ে আসছে, সেটা নিয়ে মূলত একটি চ্যালেঞ্জিং সময় আমাদের গেছে। কিন্তু দেশের মানুষও আমাদের সময় দিতে চান, তারাও ধৈর্য্য ধরতে চান।’

‘অনেক সমস্যা আছে, আসলে সর্বাঙ্গে সমস্যা। আমরা সেগুলো ধীরে ধীরে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যেই বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে, যেই কথা বলার স্বাধীনতা মানুষের মধ্যে নেই। সেই পরিস্থিতি থেকে আমরা উত্তরণ পেয়েছি এবং অন্তত এই বাকস্বাধীনতাটা ফিরে পেয়ে দেশের মানুষ খুশি আছে বলে আমরা মনে করি। তবে চ্যালেঞ্জ আছে এবং চ্যালেঞ্জ সামনেও থাকবে। আমরা আশা করি মানুষের সাপোর্ট এবং যেই জনমত আছে তার ভিত্তিতে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।’

দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য বজায় রাখার পরিকল্পনায় ক্রীড়াঙ্গনে কাঠামোগতভাবে পরিবর্তন করতে চায় সরকার। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আসলে আমরা পরিবর্তনটা করতে চাই কাঠামোগত জায়গায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা দুইটা বড় সাফল্য পেয়েছি, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য আনন্দের। এটা দেশের মানুষের জন্য একটা ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে সহযোগিতা করেছে।’

‘কিন্তু এই সাফল্যটা যাতে স্থায়ীভাবে আসে এবং আমরা যাতে একটা স্থিতিশীল জায়গায় পৌঁছাতে পারি ক্রীড়াক্ষেত্রকে, সেজন্য কাজ করে যাচ্ছি। কাঠামোগত পরিবর্তনটা মূলত আমাদের মূল উদ্দেশ্য। ক্ষণস্থায়ী সাফল্য-ব্যর্থতা এটা চলতে থাকবে, কিন্তু কাঠামোগত পরিবর্তন যদি আমরা করতে পারি ক্রীড়াক্ষেত্রে, তাহলে আমরা মনে করি লংটার্মে গিয়ে এটা আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে। বাংলাদেশ ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।’

নতুন সরকার দুর্নীতি নিয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করার আওতায় অন্যসব বিভাগের সাথে ক্রীড়াঙ্গনও রয়েছে। কীভাবে সেখানে কাজ করা হচ্ছে? কী হবে নতুন দিকনির্দেশনা সেসব নিয়ে জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ।

‘বাংলাদেশের প্রতিটা সেক্টরের মতই ক্রীড়াঙ্গনটাও কলুষিত এবং দুর্নীতিতে জর্জরিত ছিল। এখানে এক ধরণের এক নায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, প্রতিটা ফেডারেশনেই। কিছু কিছু ফেডারেশনে আমি দেখলাম প্রায় ৩৮-৪০ বছর ধরে একজন সভাপতি হিসেবে বসে আছেন। সেখানে কোনো প্রকার কার্যক্রম হচ্ছে না।’

‘আমাদের জেলা টুর্নামেন্টগুলোর ক্ষেত্রে আমি দেখলাম যে, কোনো কোনো জেলায় ৮-১০ বছর ধরে কোনো টুর্নামেন্ট হচ্ছে না। আমাদের বিভাগীয় জেলা এবং উপজেলা ক্রীড়া পরিষদগুলো সক্রিয় ছিল না। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আধিক্যের কারণে সেই ক্রীড়া পরিষদগুলো অনেকটা পলিটিক্যাল পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছিল। তো এই সমস্যাগুলোর সমাধানে আমরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছি।’

‘আপনারা জানেন যে, সারাদেশের সবগুলো ক্রীড়া পরিষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। সেটা আবার পুনর্গঠন করার জন্য আমরা একটা রূপরেখা দিয়েছি। সেই রূপরেখার ভিত্তিতে সবগুলো ক্রীড়া পরিষদ আবার পুনর্গঠন করা হবে। তারা যাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে তাদেরকে সেই জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। এখানে ক্রীড়াঙ্গনে একটা বড় সমস্যা ছিল কোনো একাউন্টেবিলিটি ছিল না। এই একাউন্টেবিলিটি ফিরে আনা হবে, যাতে করে সবাই তার কাজের জন্য জবাবদিহির আওতায় থাকে।’

‘একইসাথে ফেডারেশনগুলোতে পরিবর্তন আনার জন্য, ইতিমধ্যেই বিসিবিতে পরিবর্তন শুরু হয়েছে। আপনার দেখেছেন, এর বাইরেও বাকি ফেডারেশনগুলোতে পরিবর্তন আনার জন্য আমরা এনএসসি (জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ) থেকে একটা সার্চ কমিটি করেছি। সেই সার্চ কমিটি শুরু করে দিয়েছে। প্রত্যেকটি ফেডারেশনেই যেখানে ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন এবং আমাদের ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে এনে সেই ফেডারেশনগুলোকে রান করার ব্যাপারে সেই সার্চ কমিটি একটা প্রস্তাবনা দিবে, তার ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা ব্যবস্থা নিবো।’

ক্রীড়াঙ্গনে নতুন করে যাতে দূর্নীতি না হয় সেটা নিয়েও কাজ করছে সরকার। আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘প্রথম প্রায়োরিটিতে হচ্ছে নতুন করে যাতে দুর্নীতি না হয় সেটার দিকে চোখ রাখা। ইতিমধ্যে আপনারা দেখেছেন আমরা কিছু কাজ করেছি । যেমন এখানে একটা দীর্ঘদিনের প্র‌্যাকটিস যে, কোনো দল দেশের বাইরে খেলতে গেলে তাদের সাথে অপ্রয়োজনীয় লোকজনকে নিয়ে যাওয়া, সেটা বন্ধে ইতোমধ্যেই কার্যক্রম শুরু করেছি।’

‘এর বাইরেও মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা সেক্টরে কোথায় কোথায় দুর্নীতিগুলো হতো সে জায়গাগুলো খুঁজে দেখা হচ্ছে, সেখানে যাতে এখন আর কোন দুর্নীতি না হয় সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে । একইসাথে ইতোপূর্বে যে দুর্নীতি হয়েছে সেগুলোর বিষয়েও আমরা তদন্ত করবো। তদন্তপূর্বক আমরা ব্যবস্থা নিব। ইতিমধ্যেই বিসিবি কাজ শুরু করেছে এ বিষয়ে। বাকী ফেডারেশনগুলোতেও নেতৃত্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে ইতোপূর্বের দুর্নীতিগুলো ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে, এবং যারা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কার্যক্রমে আমরা যাব।’

নারী টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ভেন্যু বাংলাদেশ থেকে সরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গড়াবে। দেশের মাটি থেকে বৈশ্বিক আসরটি সরে যাওয়ায় বাংলাদেশের ইমেজ সংকট হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, ‘না, আমাদের বর্তমান বাস্তবতা অবশ্য সবারই জানা।’

‘বাংলাদেশে একটা বিশ্বকাপের মত ইভেন্ট আয়োজন করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বিষয় না। এখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে। মানে এটা স্টেট ডিসিশন, তো স্টেটের জায়গা থেকে মনে হয়েছে যেহেতু বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের আনরেস্ট চলছে। যেহেতু একটি ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করে আমরা দায়িত্ব পেয়েছি, তাদের অংশীজনরাও সমাজের বিভিন্ন জায়গায় রয়ে গিয়েছে। তো একটা দুর্ঘটনা যদি ঘটে। আমাদের অতিথিদের সাথে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, সেটার জন্য বাংলাদেশের একটা দীর্ঘস্থায়ী ইমেজ সংকটে পড়ার একটা জোর সম্ভাবনা ছিল। যে কারণে আমরা হোস্টিং রাইটস বাংলাদেশের কাছে রেখে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভেন্যু করার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের এটাতে বিশেষ ইমেজ সংকট হয়নি, কারণ এরপরে দুইটা বড় অর্জন আমাদের হয়েছে। আমরা মনে করি যে, আমাদের নারী ক্রিকেট দল সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে ভালো পারফরম্যান্স করবে।’

অন্তর্বতীকালীন সরকারে দুটি মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আসিফ মাহমুদ, যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়ে আসিফ বলেছেন, ‘এটা কালেক্টিভ ছিল আমি বলবো। আমি আসলে সেভাবে ভাবিনি যে, কোনটা নিব। শেষে ভেবেছিলাম যে যুব ও ক্রীড়া নেয়া যেতে পারে। বাকিদেরকে আমি জানাইনি যারা আমাদের সিলকশনের কাজটা করছিল। কিন্তু তারপরেও তারাও বুঝে নিয়েছেন এবং আমাকে বলেছেন যে তুমি যুব ও ক্রীড়াটা নাও এটা তোমার কাজের জায়গা হতে পারে।’

‘আমি এখানে এসে যেটা বুঝতে পেরেছি মোটামুটি এই জায়গাতে কাজ করতে আমি কমফোর্ট এবং একইসাথে শ্রম ও কর্মসংস্থান একটা বড় দায়িত্ব। দেশের ৭ কোটি ৩০ লক্ষ শ্রমিকদের নিয়ে আমরা কাজ করি। মোটামুটি দুটা জায়গাতেই কাজ করে আমি স্বাচ্ছন্দ বোধ করছি। এই দুইটা জায়গাতেই আসলে যুবকদেরকে নিয়ে এবং একইসাথে শ্রমিকদেরকে নিয়ে কাজ করার যে সুযোগটা পেয়েছি আশা করি সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবো।

নিজেকে কোথায় দেখতে আসিফ মাহুমদ। এমন প্রশ্নের জবাবে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নিজেকে কোথায় দেখলে, এটা মনে করার সুযোগ নেই আসলে। ক্রীড়াঙ্গনকে একটা ভালো অবস্থানে যদি দেখি আমরা মনে করি যে রাতারাতি তো পরিবর্তন করা সম্ভব না, তবে পরিবর্তনের শুরুটা আমরা করে যেতে পারি। কাঠামোগত সংস্কারগুলো করে দিয়ে যেতে পারি। যার ফলাফলটা হয়তো আজকে আসবে না। হয়তো আজ থেকে চার-পাঁচ বছর পরে কিংবা তারও পরে আসবে। তবে সেই শুরুটা যদি করে দিয়ে যেতে পারি এবং ভবিষ্যতে যদি সেই ফলাফলগুলো আসে তাহলে মনে করবো, আমি আমার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পেরেছি।’

Scroll to Top